মঞ্চ, রেডিও, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে পাঁচ দশকেরও দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ার ছিল তার। এর মধ্যে রুপালি পর্দায় তাকে খলনায়কের চরিত্রেই বেশি দেখা গেছে।
তিনি সাদেক বাচ্চু। পুরো নাম মাহবুব আহমেদ সাদেক। পারিবারিক ডাকনাম বাচ্চু। ১৯৮৫ সালে তিনি যখন তাঁর প্রথম ছবি ‘রামের সুমতি’র শুটিং করছিলেন তখন তাঁকে ‘চাঁদনি’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ করেন খ্যাতিমান নির্মাতা প্রয়াত এহতেশাম। তিনিই ভালো নাম আর পারিবারিক ডাকনাম মিলিয়ে নাম রাখেন সাদেক বাচ্চু।
১৯৫৫ সালের পহেলা জানুয়ারি জন্ম নেয়া সাদেক বাচ্চুর কৈশোর কেটেছে বড়ো কষ্টে। তার বাবা ছিলেন ডাক বিভাগের কর্মকর্তা ছিলেন। সাদেক বাচ্চু এসএসসি উত্তীর্ণ হবার তিনমাস পর ইন্তেকাল করেন তার বাবা। সে সময় সংসারের দায়িত্ব নিতে তাকে। ডাক বিভাগই তাকে একটি চাকরি দেয়। সহজেই বুঝে নেয়া যায় এসএসসি পাস ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরের কতো বেতনের চাকরি হতে পারে। এই জীবন যুদ্ধে হারেননি সাদেক বাচ্চু। চাকরির ফাঁকে ফাঁকে চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা। টিএনটি কলেজ থেকে অর্জন করেছেন স্নাতক ডিগ্রি। পাশাপাশি অভিনয়ের অদম্য নেশায় ছুটেছেন তিনি।
১৯৬৩ সালে বেতারে ‘খেলাঘর’ নাটকের মাধ্যমে তার অভিনয় জীবন শুরু। স্বাধীনতার পর তিনি গণনাট্য পরিষদ নামের একটি সংঠনের সঙ্গে জড়িত হন। এরপর বেশকটি গ্রুপ থিয়েটার ঘুরে সাদেক বাচ্চু নিজেই গঠন করেন ‘মতিঝিল থিয়েটার’। নাটক লিখেছেন, পরিচালনা করেছেন, অভিনয় করেছেন।কাফনের পকেট নাই, কুলাঙ্গার, ক্যাপ তার উল্লেখযোগ্য নাটক। এর আগে ১৯৭৪ সালে আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম প্রযোজিত ‘প্রথম অঙ্গীকার’ নাটকের মাধ্যমে তার টেলিভিশনে অভিনয় শুরু। ভালো অভিনয়ের জন্য প্রশংসিত ছিলেন। অগণিত নাটক, ধারাবাহিক, টেলিফিল্ম রয়েছে তার। নকশীকাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট, গ্রন্থিক গণ কহে, ঝুমকা, পূর্ব রাত্রি পূর্ব দিন, জোনাকি জ্বলে সাদেক বাচ্চু অভিনীত উল্লেখযোগ্য টেলিভিশন নাটক। প্রয়াত এহতেশাম পরিচালিত ‘চাদনি’ ছবিটি মুক্তির পর চলচ্চিত্রে তার ব্যাস্ততা বাড়ে। ছবির চাপে তাকে রীতিমতো হিমসিম খেতে হতো। হাসিমুখে সবার কাজ করে দিতেন অমায়িক, সজ্জন এই মানুষটি। আমার লিখা অনেক ছবিতেই অভিনয় করেছেন তিনি। সব সময়ই ছিলেন আন্তরিক।
২০১৮ সালে আলমগীর (নায়ক, প্রযোজক, পরিচালক, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব) পরিচালিত ‘একটি সিনেমার গল্প’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য, পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন সাদেক বাচ্চু। আগেই একবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, কিছুটা ভালো হয়েই দাঁড়িয়েছেন ক্যামেরার সামনে। সেই কৈশোর থেকে জীবন যুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকলেও গতবছর, ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর, ভয়ংকর করোনার কাছে হেরে যান সাদেক বাচ্চু। ঢাকার একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। প্রয়ান দিনে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে, প্রার্থনা করছি, মহান আল্লাহ যেন তাঁকে বেহেশত নসীব করেন।