খুলনা অঞ্চলের করাত কল গুলো দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ভ্যাট ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে লাইসেন্স ছাড়া হর হামেশাই চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রসাশনের পক্ষ থেকে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছেনা সচেতন মহলের পক্ষ থেকে এমনটিই অভিযোগ উঠেছে।
বাগেরহাট সামাজিক বন বিভাগের অধীনে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে খুলনা, বাগেরহাট ও পিরোজপুর জেলার করাত কল গুলো।
বাগেরহাট বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এই তিন জেলাই প্রায় ৭০০ করাত কল আছে যার ভিতর বৈধ করাত কলের সংখ্যা ৪০০ টি বাকি সবগুলোই অবৈধ অর্থাৎ লাইসেন্স ছাড়াই চলছে। তাছাড়া তালিকায় নাম নেই এ ধরনের অনেক করাত কল আছে বলে জানা গেছে। এছাড়া এগুলোর মধ্যে যাদের লাইসেন্স আছে তারাও নিয়ম-নীতি না মেনে চলছে, অধিকাংশ করাতকলে ফায়ারের
লাইসেন্স থাকলেও নেই অগ্নিনির্বাপক বোতল। মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল , কলেজ ও বাড়ির ভিতর পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই পূর্বের বন বিভাগের লাইসেন্স নিয়েই তারা করাত কল গুলো চালিয়ে যাচ্ছে তাছাড়া অনেক জায়গায় বিদ্যুতের পরিবর্তে ডিজেল মেশিন দিয়েও করাত কল গুলো হর হামেশা চলছে।
এছাড়া সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারে মধ্যে গড়ে ওঠা করাতকল গুলোর কারণে উজার হচ্ছে বনজ সম্পদ। এদিকে অননুমোদিত কলের কারণে প্রতি
বছর সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়। বন বিভাগের আইন অনুযায়ি, বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে করাতকল স্থাপন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তারপরও আইনের প্রতি কোন তোয়াক্কা না করেই গড়ে উঠেছে এসব করাতকল।
খুলনা জেলায় সামাজিক বনবিভাগ দুই ভাগে বিভক্ত একটি হচ্ছে খুলনা অঞ্চল অন্যটি ফুলতলা অঞ্চল।খুলনা অঞ্চলের অধীনে ডুমুরিয়া দাকোপ বটিয়াঘাটা কয়রা পাইকগাছা
উপজেলা ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের আংশিক এলাকা পরিচালিত হয়ে থাকে। এখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় ডুমুরিয়ার ১৮ মাইলে পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে রাবেয়া স মিল, অবৈধ এই প্রতিষ্ঠানটিতে দেদারসে কাটছে কর্তন নিষিদ্ধ ঘোষিত তালগাছ লক্ষ লক্ষ টাকার গাছ কেটে সারাদেশে সাপ্লাই দেওয়া হচ্ছে যার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য
ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এ বিষয়ে রাবেয়া স মিলের মালিক রাফিজুল শেখের সাথে কথা বললে তিনি বলেন প্রশাসন সহ সব জায়গায় টাকা পয়সা দিয়েই আমাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে হয় আপনারা রিপোর্ট করে আমাদের কি করবেন।
এ বিষয়ে সামাজিক বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটি ক্ষমতা নাই আমরা কেবলই মামলা করতে পারি কিন্তু মামলা করার পরেও
এই অবৈধ করাত কল গুলো দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে । এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মহোদয় একমাত্র আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। তারা আরো বলেন এ সমস্ত করাত কল গুলো অতিসত্বর উচ্ছেদের আওতায় আসা উচিত। এ সমস্ত অবৈধ করাত কলের বিষয়ে আরো জানা যায়, সংরিক্ষত বন থেকে চোরাই পথে আনা বিভিন্ন গাছ অবাধে চেরাই ও বিক্রি হচ্ছে এসব করাত কলে। বন উজারের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী।
এতে হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ।
করাতকল বিধিমালা ২০১২ এর আইনে বলা আছে, কোনো সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যান এবং জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে এমন স্থান থেকে কমপক্ষে ২০০ মিটার এর মধ্যে করাত কল স্থাপন করা যাবে না। সরকারি বনভূমির সীমানা থেকে কমপক্ষে
১০ কিলোমিটারের মধ্যে এটা নিষিদ্ধ। অথচ এই নিদের্শনা মানছে না কেউ। বিধি-বহির্ভূতভাবে যত্রতত্র বসানো হয়েছে করাত কল। আর এসব কল গুলো দেদারসে চলার কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বৈধ করাতকল গুলো। তাছাড়া সরকারি জায়গা দখল করে রাস্তার পাশে ফুটপাত দখল করে বাজারের ভেতর এসব করাত কলগুলো হর হামেশাই চলছে। অবৈধ করাত কল মালিকদের সাথে কথা বললে তারা বলেন আমরা
বনবিভাগের সাথে যোগাযোগ করেই দীর্ঘদিন ধরে এগুলো চালিয়ে আসছি আমাদের কোন সমস্যা হয় না। এ বিষয়ে সমাজের সচেতন মহল বলেন বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার এ সমস্ত অবৈধ করাত কলের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।