সরকারি অনুদানের টাকায় হুমায়ূন আহমেদের ‘পেন্সিলের আঁকা পরী’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন নন্দিত নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী। অনুদানের প্রথম কিস্তির যে টাকা পেয়েছিলেন, তা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এর জন্য তাকে প্রথম কিস্তির টাকার সঙ্গে সুদও দিতে হবে।
সরকারি অনুদানে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরের আওতায় ৬০ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছিলেন অমিতাভ রেজা। এরই মধ্যে প্রথম কিস্তির ১৮ লাখ টাকা তিনি পেয়েছেন। প্রথম সেই কিস্তির সেই টাকাই সরকারকে ফেরত দিচ্ছেন এই নির্মাতা।
অমিতাভ রেজা চৌধুরী বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী ও সন্তানদের সমন্বয়ে একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠিত হয়েছে। স্যারের (হুমায়ূন আহমেদ) কোনো উপন্যাস বা অন্য কিছু্র কপিরাইটসহ সার্বিক বিষয়গুলো দেখছে। আমি শুধু এতটুকু বলতে পারি— ট্রাস্ট থেকে ওই উপন্যাসের লেখার স্বত্ব তথা কাহিনীর স্বত্ব বাবদ বেশ ভালো অঙ্কের অর্থ চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর রেভিনিউ শেয়ারও (চলচ্চিত্রের আয়ে অংশীদারিত্ব) চেয়েছে। আমার পক্ষে এই ব্যয় এই মুহূর্তে বহন করা সম্ভব নয়।’
হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসটি থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য অনুমতি নিয়েছিলেন আরেক নন্দিত নির্মাতা আবু সাইয়িদ। পরে তার কাছ থেকে অনুমতি নেন অমিতাভ রেজা। এরপর প্রায় ১০ বছর ধরে এটি নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। রঞ্জন রব্বানীকে সঙ্গে নিয়ে তিন বছর ধরে লিখেছেন চিত্রনাট্য। সরকারি অনুদানের জন্য আবেদন করার আগে হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের সঙ্গেও আবার কথা বলেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী।
যে চলচ্চিত্রটি নিয়ে এত দীর্ঘ সময় ব্যয় করেছেন, সেটি নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কঠিন ছিল অমিতাভ রেজার জন্য। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নিতে তিনি বাধ্য হয়েছেন বলে জানালেন।
অমিতাভ রেজা চৌধুরী বলেন, ‘স্যার (হুমায়ূন আহমেদ) এবং তার পরিবারের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ছিল এবং এখনো আছে। ট্রাস্ট্রি বোর্ডের শর্ত নিয়েও আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে এটুকু বলতে পারি— মনে কষ্ট পেয়েছি। কারণ আমাকে সরকার ৬০ লাখ টাকা দিচ্ছে ছবিটি নির্মাণের জন্য। এখন সুন্দর করে ছবিটি বানাতে আমাকে সরকারের অর্থের সঙ্গে সমপরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। ফলে বোর্ডের শর্ত মেনে ছবিটি বানানো আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।’
এরই মধ্যে অনুদানের অর্থ ফেরতের বিষয়টি অমিতাভ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছেন। গত আগস্টের শেষ সপ্তাহে প্রথম কিস্তির টাকা ফেরত দেওয়ার আবেদনও করেছেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় তাকে ছবিটি বানানোর কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা বললেও তিনি অপারগতা জানিয়েছেন। আর সে কারণেই প্রথম কিস্তির ১৮ লাখ টাকার সঙ্গে জরিমানা হিসেবে ১৮ হাজার টাকা ফেরত দিতে হবে তাকে।
অমিতাভ রেজা বলেন, ‘মন্ত্রণালয় আমাকে বলেছিল, এ বিষয়টি কোনোভাবে সুরাহা করা যায় কি না। আমি জানিয়ে দিয়েছি, সেটি সম্ভব নয়। তখন তারা আমাকে বলেছে টাকা ফেরত দিলে সুদসহ দিতে হবে। খুব সম্ভবত প্রথম কিস্তির ১৮ লাখ টাকার জন্য অতিরিক্ত ১৮ হাজার টাকা জমা দিতে হবে।’
‘টাকা আমার অ্যাকাউন্টেই আছে। আমরা এখনো কোনো টাকা খরচ করিনি। মন্ত্রণালয় থেকে বললেই ফেরত দিতে পারব,’— বলেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী।
এ বিষয়ে জানতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (চলচ্চিত্র-১) মো. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, মন্ত্রণালয় অমিতাভ রেজার আবেদন পেয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
হুমায়ূন আহমেদের ট্রাস্টি বোর্ডের পক্ষ থেকে অমিতাভ রেজাকে কী বলা হয়েছিল— এ বিষয়ে জানতে পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও ছেলে নুহাশ হুমায়ূনের সঙ্গে। শাওন ফোন না ধরলেও নুহাশ হূমায়ূন বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। শর্তাবলির বিষয়ে আপনারা অমিতাভ ভাইকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।’
২০২০-২১ অর্থবছরের অনুদান কমিটির সদস্য ও চলচ্চিত্র পরিচালক ড. মতিন রহমান পুরো ঘটনাকে দুঃখজনক বলেছেন। তিনি বলেন, ‘টাকা ফেরত দেওয়ার কারণগুলো তো যৌক্তিক। কারণ উনি (অমিতাভ রেজা) তো শিল্পী, চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন। এভাবে বিপদে পড়বেন, উনি তো জানতেও পারেননি। ঘটনাটি শেষ পর্যন্ত ঘটলে তা দুঃখজনক হবে। উনি একজন গুণী নির্মাতা। তার নির্মাণ কৌশলের জন্য আমরা একটি ভালো ছবি পেতাম। এখন দেশ বঞ্চিত হলো।’