দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার পাকেরহাট শাপলা চত্ত্বরে একই সময়ে উপজেলা বিএনপির দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে দিনভর নানা নাটকীয়তা ও উত্তেজনা। এতে দীর্ঘদিনের গ্রুপিং আবার প্রকাশ্যে রুপ নিয়েছে। এতে দুই গ্রুপের কর্মসূচী ঘোষণা ঘিরে উপজেলা জুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করে। সেই সাথে নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে কথার লড়াই ও বাগযুদ্ধ। এরই জেরে কর্মসূচীতে অংশগ্রহণের সময় দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে বিএনপির এক গ্রুপের কার্যালয় ভাংচুর ও এক কর্মীকে আহতের অভিযোগ উঠেছে। রাজনৈতিক এই উত্তেজনায় দুপুর পর্যন্ত অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ দেখা যায়। বর্তমানে প্রকাশ্যে দুই ভাগে বিভক্ত খানসামা উপজেলা বিএনপির একটি অংশ কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান মিয়ার অনুসারী এবং আরেকটি অংশ এই সংসদীয় আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কর্ণেল (অব:) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর অনুসারী। এই গ্রুপটি ইতিপূর্বে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও শিল্পপতি হাফিজুর রহমান সরকারের অনুসারী ছিল। সম্প্রতি হাফিজুর রহমান সরকার এই আসনের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। রবিবার (১৬ মার্চ) সকালে পাকেরহাট শাপলা চত্বরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নেতাকর্মীদের উপর হামলার প্রতিবাদে ভোরবেলা থেকেই মানববন্ধনের জন্য জড়ো হতে থাকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কর্ণেল (অব:) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর অনুসারী নেতাকর্মী ও সাধারণ জনতা। প্রায় সকাল সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত চলে এই গ্রুপের মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ। এসময় উপস্থিত ছিলেন কর্ণেল (অব:) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক চৌধুরী, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শাহরিয়ার জামান শাহ নিপুণ, উপজেলা বিএনপির সদস্য আজিজার রহমান শাহ ও মহসীন আলী, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আব্দুর রউফসহ উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। কর্ণেল গ্রুপের কর্মসূচীর শেষের দিকে সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান মিয়ার অনুসারীরা বিক্ষোভ মিছিলের জন্য পাকেরহাট জাকির মার্কেট এলাকায় জড়ো হতে শুরু করলে দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এসময় মিয়া গ্রুপের অনুসারী সাব্বির হোসেন নামে ছাত্রদলের এক কর্মী আহত হন। সেই সাথে মিয়া গ্রুপ দাবি করেন কর্ণেল গ্রুপের অনুসারীরা তাদের দলীয় কার্যালয় ও আসবাবপত্র ভাংচুর করেন। এরপরে খানসামা উপজেলা বিএনপির সুসংগঠিত রাজনীতি তে দ্বিধাবিভক্ত করার ষড়যন্ত্র ও আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনঃর্বাসনের প্রতিবাদে সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান মিয়া গ্রুপের অনুসারী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আমিনুল হক চৌধুরী ও উপজেলা যুগ্ম আহবায়ক রবিউল আলম তুহিনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন গোয়ালডিহি ইউপি চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন লিটন ও নেতৃবৃন্দ। স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মীর সাথে আজকের পত্রিকার এই প্রতিবেদকের কথা হলে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দিনাজপুর-৪ সংসদীয় আসনের চিরিরবন্দর উপজেলায় বিএনপির ব্যানারে দোয়া ও ইফতার মাহফিল করার ঘোষণা দিয়ে সফরসূচি প্রকাশ করেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কর্নেল (অব:) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর অনুসারীরা। এরপরই দুই পক্ষের গ্রুপিং ও দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রুপ নিতে শুরু করে। কর্ণেল গ্রুপ দাবি করেন সফরসূচি অনুযায়ী ১৪ মার্চ চিরিরবন্দর উপজেলার কারেঙ্গাতলী বাজারে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তাঁদের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপর হামলা করে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান মিয়ার অনুসারীরা। ফলে দোয়া ও ইফতার মাহফিল স্থগিত হয়। সেই হামলার প্রতিবাদে আহতদের পরিবারবর্গ ও এলাকাবাসীর ব্যানারে রবিবার (১৬ মার্চ) সকালে খানসামা উপজেলার পাকেরহাট শাপলা চত্বরে মানববন্ধন করার ঘোষণা দেয় কর্নেল (অব:) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর অনুসারীরা। এই মানববন্ধনে ঘোষণার পরই কর্ণেল (অব:) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর ও উপজেলা বিএনপিকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্রকারী আখ্যা দিয়ে এর প্রতিবাদে ভিডিও বার্তায় একই স্থানে একই সময়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান মিয়ার অনুসারী হিসেবে পরিচিত উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আমিনুল হক চৌধুরী বিএসসি, যুগ্ম আহবায়ক রবিউল আলম তুহিন এবং মোসলেম উদ্দিন সরকার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দুই গ্রুপ তাঁদের নিজস্ব বিজ্ঞপ্তি ব্যবহার করে বিক্ষোভ কর্মসূচীর প্রচার-প্রচারণা করতেছে। একই স্থানে একই দিনে সমাবেশ ঘিরে ইতিমধ্যেই ফেসবুক ও স্থানীয়দের মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। কর্ণেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী আয়োজিত ইফতার মাহফিলে হামলার প্রতিবাদেই মানববন্ধন ডাকা হয়েছে। অন্যদিকে, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক চৌধুরী ও যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল আলম তুহিন বলেন আখতারুজ্জামান মিয়ার নেতৃত্বে এই আসনে বিএনপিকে বিভক্তকরণের ষড়যন্ত্র ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তাদের এই বিক্ষোভ কর্মসূচি।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান সরকার ও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজমূল হক প্রতিদিনের বলেন, একই সময় ও একই স্থানে কর্মসূচী করতে বিএনপির দুই পক্ষকে নিরুৎসাহিত করা হয়।আলাপ-আলোচনা বা সমঝোতা করে কর্মসূচী করতে তাদেরকে বলা হয়েছে। এতে প্রশাসন ও পুলিশ তাদের সহযোগিতা করবে। অন্যথায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়।