সোফিয়া লরেন শুনলেই ‘টু উইমেন’ ও ‘সানফ্লাওয়ার’ ছবি দুটির কথাই আমাদের দেশের দর্শকদের মনে পড়ে সবার আগে। তিনি ১৯৩৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জন্মেছিলেন ইতালির রোমে। বড় হয়েছিলেন সে দেশের নেপোলিতে, খুবই দরিদ্র একটি পরিবারে। তাঁর ভালো নাম সোফিয়া ভিল্লানি সিকোলোন। অভিনয় কী হতে পারে, একটি চরিত্রকে দর্শকের হৃদয়ে কী ভাবে গেঁথে দিতে পারে তার উদাহরন সোফিয়া লরেনের অভিনয়। ১৯৫০ সালে, মাত্র ১৬ বছর বয়সে চলচ্চিত্র অভিনয় শুরু করেন সোফিয়া লরেন। এর মধ্যদিয়েই তার অভিনয় যোগ্যতা এবং অভিব্যক্তির আবেদন চোখে পড়ে যায় অনেকের। ১৯৫৬ সালে প্যারামাউন্ট পিকচার্স এর কমপক্ষে ৫ টি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হবার মাধ্যমে শুরু হয় এই শিল্পীর আন্তর্জাতিক যাত্রা।
ধীরে ধীরে এই মেয়েটিই একসময় হয়ে উঠল আন্তর্জাতিক তারকা। তাঁর অভিনয় প্রতিভা এবং সৌন্দর্য দিয়ে বিশ্ব মাতিয়েছেন তিনি। তারুণ্যের শুরুতেই বিভিন্ন সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন সোফিয়া। একসময় তিনি ইতালিয়ান প্রযোজক কার্লো পন্টির নজরে পড়েন। বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে পন্টি সোফিয়াকে চলচ্চিত্রের ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করান। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি কালো চুলের এই মেয়েটি পরিণত হন তারকায়। আন্তর্জাতিক খ্যাতি পান তিনি ইংরেজি ভাষায় নির্মিত ছবি ‘বয় অন এ ডলফিন’ ও ‘দ্য প্রাইড অ্যান্ড দ্য প্যাশন’ ছবিতে অভিনয় করে। প্রথম ছবিতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন অ্যালান ল্যাড। দ্বিতীয়টির নায়ক ফ্র্যাঙ্ক সিনাত্রা ও ক্যারি গ্রান্ট। ছবি দুটির পরিচালক স্ট্যানলি ক্র্যামার, যার ‘জাজমেন্ট অব ন্যুরেমবার্গ’, ‘গেস হু’স কামিং টু ডিনার’ ছবিগুলোর কথাও নিশ্চয় অনেক পাঠকের মনে পড়ে যাবে।
এক ঝলকে সোফিয়া লরেনসোফিয়া লরেন বিয়ে করেন ১৯৫৭ সালে। বর কার্লো পন্টি। আগের স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর তিনি সোফিয়াকে বিয়ে করেন। ইতালিতে ক্যাথলিকদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের নিয়ম নেই। তাই তাঁদের বিয়ে হয় মেক্সিকোতে।এক ঝলকে সোফিয়া লরেন
ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক ছবিতে অভিনয় করতে থাকেন সোফিয়া। ১৯৬০ সালে ক্লার্ক গেবলের বিপরীতে ‘ইট স্টারটেড ইন নেপলস’, একই বছর পিটার সেলার্সের সঙ্গে ‘দ্য মিলিওনিয়ার্স’, চার্লটন হেস্টনের বিপরীতে ১৯৬১ সালে ‘এল সিড’ ছবিতে অভিনয় করে নাম কুড়ান। ১৯৬২ সালে তিনি ‘টু উইমেন’ ছবির জন্য একাডেমি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন (ছবিটি ১৯৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পেয়েছিল)। বিদেশি ভাষার ছবিতে অভিনয় করে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার তিনিই প্রথম পান। মার্চেলো মাস্ত্রোইয়ানির সঙ্গে সোফিয়া লরেন যে ছবিগুলো করেছেন (যার মধ্যে আছে ‘সানফ্লাওয়ার’, ‘ম্যারেজ ইটালিয়ান স্টাইল’ ইত্যাদি), সেগুলো ছিল দর্শকনন্দিত। পল নিউম্যান, গ্রেগরি পেক, মার্লন ব্রান্ডোর মতো অভিনেতাদের সঙ্গে তিনি দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। চার্লি চ্যাপলিন পরিচালিত শেষ ছবি ‘এ কাউন্টেস ফ্রম হংকং’-এ ছিলেন সোফিয়া লরেন।
তিনিই প্রথম শিল্পী যিনি, ইংরেজি ভাষা ব্যতীত বিদেশি ভাষার ছবিতে অভিনয় করে অস্কার জয় করেছেন। ১৯৯১ সালে অস্কার তাকে সম্মানসূচক “লাইফটাইম এচিভমেন্ট” প্রদান করে। বিশ্বে সোফিয়া লরেন, সত্যজিৎ রায় সহ এ পর্যন্ত মাত্র সাতজন এই বিরল সম্মাননা অর্জন করেছেন। অ্যামেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট তাঁকে হলিউডের সোনালী যুগের ধ্রুপদ সিনেমার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ নারী শিল্পীর তালিকায় ২১ তম স্থানে রেখেছে। তবে জীবন্ত কিংবদন্তি সোফিয়া লরেন দুই ছেলের জন্মের পর ধীরে ধীরে পর্দার আড়ালে চলে যেতে শুরু করেন। ২০০২ সালে ছেলে এদোয়ার্দো পন্টির পরিচালনায় ‘ইন বিটউইন স্ট্রেনজারস’ ছবিতে অভিনয় করে আবার চলচ্চিত্রে কামব্যাক করেন।
্যঙ্কিং এ সোফিয়া লরেনের স্থান সবার শীর্ষে। ১৯৬৪ সালে ‘ম্যারেজ ইতালিয়ান স্টাইল’ ছবির জন্য তিনি আবারও পেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর ‘অস্কার’ মনোনয়ন। সোফিয়া লরেনই একমাত্র অভিনেত্রী যিনি শ্রেষ্ঠ অভিনয়ের জন্য সাতবার পেয়েছেন ‘ডেভিড ডি ডোনাতেলো এওয়ার্ড’ এবং আজীবন সম্মাননা। তিনি পাঁচবার পেয়েছেন গোল্ডেন গ্লোব এওয়ার্ড। এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক অনেক অনেক পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি। তার অভিনীত হলিউডের ছবিগুলোর মধ্যে, ‘এল সিড’, ‘দ্য ফল অফ দ্য রোমান এম্পায়ার’, ‘অ্যারাবেস্ক’, ‘ম্যান অফ লা মাঞ্চা’, ‘দ্য ক্যাসান্ড্রা ক্রসিং’ অন্যতম। ১৯৩৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ইতালির রোমে জন্মগ্রহণ করেন সোফিয়া লরেন। জন্মদিনের শুভেচ্ছা বিশ্বের এই জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনয় শিল্পীর প্রতি।