Crime News tv 24
ঢাকারবিবার , ২৩ মার্চ ২০২৫
  1. অন্যন্য
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. খেলা
  5. জাতীয়
  6. দেশজুড়ে
  7. ধর্ম
  8. ফিচার
  9. বাংলাদেশ
  10. বিনোদন
  11. মতামত
  12. রাজনীতি
  13. রান্না
  14. রাশিফল
  15. লাইফস্টাইল
আজকের সর্বশেষ সবখবর

চুয়াডাঙ্গার কেরু এন্ড কোম্পানীর ডিস্টেলারি মামুনের জিরো থেকে হিরো হওয়ার গল্প।গড়েছে অবৈধ সম্পদের বিশাল পাহাড়।

admin
মার্চ ২৩, ২০২৫ ৭:১২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নিজস্ব প্রতিবেদক:- 

চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা থানাধীন  তিতুদহ ইউনিয়নের ছোট শলুয়া গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে আব্দুল্লাহ আল-মামুন  অভাব ঘোঁচাতে সে সেনাবাহিনীতে চাকরী নেয়।সেখানে কর্মরত অবস্থায় নারী ঘোটিত একটি বিষয়ে তিনি চাকরিচ্যুত হয়। বাবার দেড় বিঘা জমি ছিলো। তার বাবা জামাল উদ্দিন একই গ্রামের ছিদ্দিকের স্ত্রী সাহারবানুকে বিয়ে না করেই জোর করে তাদের বাড়ীতে রেখে দেয়। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়। ওই মামলায় তার বাবার ১৪ বছর কারাদণ্ড দেয় আদালতের বিজ্ঞ বিচারক। এরপর দেড় বিঘা জমির মধ্যে ১ বিঘা জমি বিক্রি করে মামুন। জমি বিক্রির টাকা ব্যয় করে উচ্চ আদালত থেকে জামিন করিয়ে নেয় তার বাবা জামাল উদ্দিনকে। এরপর ১০ কাঠা জমি নিয়েই তাদের পথ চলা। ২০০৩ সালে একই উপজেলার হিজলগাড়ী বাজারের জাহিদ মার্কেটে একটি মোবাইল ফোন-ফ্লাক্সির দোকান দেয় মামুন। ২০০৫ সালে দর্শনা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মরহুম মতিয়ার রহমানের চাচাতো ভাই পৌর এলাকার ঈশ্বরচন্দ্রপুরের মরহুম শওকত আলী রাঙ্গার মেয়েকে বিয়ে করে মামুন। তারপর শশুরকুল থেকে তাকে দর্শনা কেরু এ্যান্ড কোম্পানীতে চাকরীর ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। এরপর থেকে মামুনকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।সে টাকার মেশিনে পরিণত হয়। কেরু কোম্পানীর মদ চুরি করে বিক্রি, ফেন্সিডিল চোরাচালানসহ সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগার টগরকে ব্যবহার ও বিভিন্ন  অপকর্ম  করে কয়েক শত কোটি টাকার মালিক হয়ে যা মামুন।

কেরু এ্যান্ড কোম্পানীর দাপ্তরিক সূত্রে জানা যায়, আব্দুল্লাহ আল-মামুন গত ২০০৮ সালের ১৪ মে কেরুতে ইক্ষু উন্নয়ন সহকারী (সিডিএ) হিসেবে যোগদান করে। একই বেতন স্কেলে ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর কেরুর ডিস্টিলারী বিভাগে ফরেন লিকার শাখায় ভারপ্রাপ্ত অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দেয়। একই স্থানে ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর অফিস সহকারী হিসেবে পদন্নোতি পেলে গত ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর সূত্র নং কেরু সংস্হা/ পিএফ/ ২০৬৪ স্মারকে পূণরায়  তাকে ইক্ষু উন্নয়ন সহকারী (সিডিএ) হিসেবে বদলি করা হয়। কিন্তু সে, সেখানে যোগদান না করে ডিস্টিলারীতে বিক্রয় সহকারী হিসেবে  থাকার জন্য প্রধান কার্যালয় বরাবর গত ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর একটি আবেদন করে। ওই আবেদন পত্রের কোন দাপ্তরিক জবাব না আসলেও মামুন অবৈধভাবে ডিস্টিলারতেই কর্মরত আছে এবং যথারীতি হাজিরা খাতায় সই করে যাচ্ছে।  গত ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর রাতে RAB-3 সাভার আমিন বাজার থেকে ৫ কোটি ৫২ লাখ টাকার ১৮ হাজার বোতল কেরু এ্যান্ড কোম্পানীর দেশী মদ ও ৩০০ বোতল ফেন্সিডিল এবং ১টি কাভার্ডভ্যানসহ ২জনকে আটক করে। এ ঘটনার সাথে মামুন জড়িত রয়েছে বলে একটি বিস্বস্ত সূত্র দাবী করেছে। ওই সূত্র জানিয়েছে চট্টগ্রামে কেরু এ্যান্ড কোম্পানীর নিজস্ব ওয়্যার হাউজ রয়েছে। যেখান থেকে লাইসেন্সধারী মদ বিক্রেতারা তাদের চাহিদা মত মদ কিনতে পারে। মামুন ডিস্টিলারীতে অবৈধভাবে দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকে সে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার মদ ক্রেতাদের দর্শনায় নিয়ে আসে। দর্শনা ডিস্টিলারী থেকে চাহিদার অতিরিক্ত মদ চুরি করে সে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতো এবং ভারত সীমান্ত দিয়ে যে সকল অবৈধ ফেন্সিডিল দর্শনায় আসতো সেগুলো ওই মদ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দিত। মদের চালানের সাথে বৈধ-অবৈধ মদ ও ফেন্সিডিলের চালান দেশের বিভিন্নস্হানে মামুন ছড়িয়ে দিতো। মামুনের সাথে এই অপকর্মের সহযোগী হিসেবে কাজ করতো চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর। এই সহযোগীতার জন্য টগরকে, মামুন প্রচুর টাকা রোজগার করিয়ে দিতো। মামুনের সাথে সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগার টগরের জামাই-শ্বশুর সম্পর্ক ছিলো। এ কারনে মামুন কাউকে তোয়াক্কা করতো না।

মামুন সাবেক সংসদ সদস্য টগরের সহযোগীতায় কেরুতে শ্রমিক ও বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষক নিয়োগ বানিজ্য করতো। এই বানিজ্য করে সে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নেতাকর্মীদের কেউ কেউ পালিয়েছে আবার কেউ কেউ গা ঢাকা দিয়েছে। এরপর মামুন দাবী করতে থাকে বিএনপির নেতাদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে সে প্রকাশ্যে বেড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এ বিষয়টি জানাজানি হলে গত ২০২৪ সালের ৬ নভেম্বর বেলা ১২ টার দিকে দর্শনা রেলবাজারের বীজ গুদামের সামনে আমিরুলের চায়ের দোকানে মামুন একদল যুবকের হামলার শিকার হয়। ওই সময়ে তার হাত ভেঙ্গে যায়। এ সময় সে পালিয়ে নিজেকে রক্ষা করে। এ ঘটনার পর থেকে মামুন আত্মগোপনে আছে। তিনি নিয়মিত  অফিস না করলেও কর্তৃপক্ষকে আয়ত্ত করে কেরুর ডিস্টিলারীর গোডাউন শ্রমিক সরদার ছোট শলুয়া গ্রামের ইসাহাকের মাধ্যমে অফিস থেকে হাজিরা খাতা নিয়ে এসে গোপনে সই করে যাচ্ছে, যা বড় ধরনের অনিয়ম।

কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ছোট শলুয়া চেংমারী জোলপাড়ার দিকে যেতে কেরুর বেগমপুর কৃষি খামারের জমি দখল করে মামুন গোডাউন ও গরুর খামার তৈরী এবং একই গ্রামের বিআরডিবির কৃষি সমবায় সমিতির পুকুর দখল করে বাড়ী করেছে। ছোট শলুয়া গ্রামের কুমিল্লাপাড়ার আরশাদ আলীর ছেলে খলিলুর রহমান ও জলিলের কেনা সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে জোর করে রাতারাতি পুকুর খনন করে সেটা দখলে রেখেছে মামুন। ভুক্তভোগীরা তার ভয়ে থানায় মামলা করতে না পেরে আদালতে মামলা করেছে। ওই গ্রামের জোনাব আলীর ছেলে মিজানের ৭ কাঠা জমি সে দখল করে রেখেছে। তিনি কেরুর ডিহি কৃষি খামারের একদিকে হিজলগাড়ীর মিলন ফার্মের মালিকের কাছ থেকে ৯০ লাখ ও একই এলাকার হামিদুল্লার কাছ থেকে ১ কোটি টাকা দিয়ে  জমি, প্রবাসী শরিয়ত উল্লার কাছ থেকে বেগমপুর কলোনী পাড়ার বাজারের পুলিশ ক্যাম্প সড়কে মার্কেটসহ দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ী, বেগমপুর রেজার কাছ থেকে  ৮০ লাখ টাকা দিয়ে ১ দাগে ৪ বিঘা, ছোট শলুয়ার মাসুদের কাছে থেকে ৮০ লাখ টাকায় ৪ বিঘা, একই গ্রামের সাদ আহাম্মেদ মাস্টারের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকায় ২ বিঘা, ওই গ্রামের ইছা মোল্লার কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকায় আড়াই বিঘা জমি কিনেছে। কুমিল্লাপাড়ার সমিতির পুকুর থেকে চেংমারী জোল পর্যন্ত ১০ কোটি টাকা দিয়ে ১ দাগে ৪০ বিঘা, একই গ্রামের কাশেমের ছেলে শহিদুলের কাছ থেকে  ৩০ লাখ টাকায় দেড় বিঘা, আলাউদ্দিনের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা দিয়ে ২ বিঘা, শরিফের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা দিয়ে আড়াই বিঘা জমি, দলিলে কম দাম দেখিয়ে আব্বাসের কাছ থেকে ২৯ লাখ টাকায় আড়াই বিঘা জমি কিনেছে। ছোট শলুয়া গ্রামে তার রয়েছে ৬টি নিজস্ব বাড়ী, চুয়াডাঙ্গা শহরের কবরী রোডে ১টি ৬ তলা বাড়ী, ৩টি গাড়ী, ঢাকাতে ৮টি ফ্লাট বাড়ী, ডাচ বাংলা ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখা ও অগ্রণী ব্যাংক  দর্শনা শাখায় কয়েক কোটি টাকার এফডিআর রেয়েছে। কট বন্ধক রয়েছে সর্বনিম্ন ৩ লাখ থেকে প্রায় ৫-৬ কোটি টাকা। সূত্র জানিয়েছে, এ জেলায় তার বিভিন্ন স্থানে ৪০০ বিঘা জমি রয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, বিভিন্ন ঝামেলা ঠেকাতে মামুনের নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে। বাহিনীর সদস্যরা গোটা এলাকায় সশস্ত্র তান্ডব চালিয়ে এলাকার লোকজনকে ভীতিকর অবস্থায়  রেখেছে। এখনো কেউ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পায়না। বাহিনীর সদস্যরা হলো রবিউল,  আরমান, আখতার, জামাত আলী, সামাদ, সাইদুর, আকছেদ, চঞ্চল,  কুদ্দুস,  জামালসহ ৪০ জন।

আব্দুল্লাহ আল-মামুনের সাথে এসব বিষয় নিয়ে কথা বললে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ গুলো সত্য নয়। আমি পরিচ্ছন্নভাবে কাজ করি বলে আমার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে অনেকে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। অসুস্থতার কারনে আমি আমার কর্মস্থলে আসতে পারিনা,এটা কেরু কর্তৃপক্ষ জানে।#