নিজস্ব প্রতিবেদক:-
রমজান মানেই ইবাদত, সংযম এবং আত্মশুদ্ধির মাস। এই মাসে ধনী-গরিব সবাই মিলে একসঙ্গে ইফতার করে, সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তবে সমাজের কিছু অসহায়, দুঃস্থ মানুষ রয়েছে, যারা অর্থাভাবে পর্যাপ্ত খাবার ও ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়। ঠিক সেই জায়গা থেকে আলোর ছোঁয়া মানব কল্যাণ সোসাইটি তাদের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছে।
আজ ২৪ রমজান, মঙ্গলবার, কেরানীগঞ্জের একটি জনবহুল এলাকায় সংগঠনটি গরিব-দুঃস্থদের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে। এই মহতী উদ্যোগে অংশগ্রহণ করেন দেশবরেণ্য সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ও সমাজসেবকরা।
আয়োজকদের তরফ থেকে জানানো হয়, তারা প্রতিবছরই এমন আয়োজন করে থাকেন। তবে এবার আয়োজনটি আরও বড় পরিসরে করা হয়েছে, যাতে আরও বেশি মানুষকে সাহায্য করা যায়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণা গ্রিণ সিটির চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক আবুল হোসেন, সভাপতিত্ব করেন আলোর ছোঁয়া মানব কল্যাণ সোসাইটির চেয়ারম্যান ও প্রতিদিন খবরের সম্পাদক সরকার জামাল, সঞ্চালনা করেন আলোর ছোঁয়া মানব কল্যাণ সোসাইটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও দৈনিক আলোর জগত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক তুহিন ভূঁইয়া।
উক্ত অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার উপদেষ্টা আবুল বাসার মজুমদার, প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদ খাঁন।
উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নিরাপদ চিকিৎসা চাই সংস্থার চেয়ারম্যান যুবরাজ খাঁন, আলোর ছোঁয়া মানব কল্যাণ সোসাইটির ভাইস-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার কেয়া সেন, বিডিসি ক্রাইম বার্তার সম্পাদক ও বাংলাদেশন অনলাইন সাংবাদিক কল্যান ইউনিয়ন (বসকো)-এর মহাসচিব প্রতিদিনের কাগজের ক্রাইম রিপোর্টার ফয়সাল হাওলাদার।
অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রেখেছেন দৈনিক আলোর জগত পত্রিকার সাংবাদিক এরশাদউল্লাহ, সাংবাদিক নীপা আক্তার, দৈনিক রূপবাণী পত্রিকার সাংবাদিক ইমরান হোসেন ইমু, তরুণ উদ্যোক্তা আফতাব উদ্দিন আহমেদ, দৈনিক মুক্তখবর পত্রিকার সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম খোকা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের বক্তারা বলেন, “আমাদের সংগঠন কেবল ইফতার আয়োজনেই সীমাবদ্ধ নয়। বছরের বিভিন্ন সময় আমরা অসহায়দের জন্য কাজ করে থাকি। আজকের এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা সমাজের দুঃস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি।”
“মানুষের প্রকৃত ধর্ম মানবতা। ধনী-গরিবের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আমাদের উচিত সবাইকে সাহায্য করা। রমজানের শিক্ষা হলো ত্যাগ ও সহানুভূতি। আলোর ছোঁয়া মানব কল্যাণ সোসাইটি সত্যিই একটি প্রশংসনীয় কাজ করেছে।”
অনুষ্ঠানের প্রধান অংশ ছিল দুঃস্থদের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ। সামগ্রী পেয়ে অসহায় মানুষদের চোখে ছিল আনন্দের ঝিলিক। ৬৫ বছর বয়সী হাজেরা বেগম বললেন, “আমার স্বামী মারা গেছেন, ছেলে কাজ করে সংসার চালায়। ঈদের বাজার করা আমাদের জন্য বিলাসিতা। এই সংগঠনের দেওয়া খাবার পেয়ে আমাদের পরিবার অন্তত ঈদের দিন ভালোভাবে খেতে পারবে।”
আরেক বৃদ্ধ, রফিক মিয়া বলেন, “এমন সাহায্য পেলে অন্তত কিছুদিন একটু স্বস্তিতে থাকা যায়। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন।”
সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও দৈনিক আলোর জগত পত্রিকার প্রধান সম্পাদক তুহিন ভূঁইয়া। তিনি পুরো অনুষ্ঠান দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেন এবং অতিথিদের পরিচয় করিয়ে দেন।
অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয় এক অনাড়ম্বর ইফতার মাহফিল। যেখানে ধনী-গরিব সবাই একত্রে বসে ইফতার করেন। একসঙ্গে বসে ইফতার করায় একধরনের সামাজিক সাম্যের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সমাজের উচ্চবিত্তরাও সাধারণ মানুষের সঙ্গে বসে খেয়েছেন, যা সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
বক্তারা আরো বলেন, কেরানীগঞ্জে অনেক দরিদ্র পরিবার রয়েছে, যারা ঈদের দিনেও একমুঠো ভালো খাবারের নিশ্চয়তা পায় না। এই সংগঠন প্রতিবছর এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়।
“আমরা কেবল ঈদ নয়, বর্ষা-শীত কিংবা অন্যান্য সময়েও ত্রাণ বিতরণ করি। ভবিষ্যতে আমরা আরও বড় পরিসরে কর্মসূচি গ্রহণ করব।”
“সাংবাদিকতা শুধু খবর সংগ্রহের জন্য নয়, বরং অসহায় মানুষের কথা বলার জন্য। আমাদের দায়িত্ব সমাজের জন্য কিছু করা।”
“আলোর ছোঁয়া মানব কল্যাণ সোসাইটি যেভাবে এগিয়ে এসেছে, সেটি অনুকরণীয়। আমাদের সমাজে ধনীদের উচিত দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানো।”
আলোর ছোঁয়া মানব কল্যাণ সোসাইটির এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। ধনী-গরিবের বিভেদ ভুলে সমাজের প্রত্যেক মানুষের এক হয়ে থাকার বার্তাই ছড়িয়ে দিয়েছে এই আয়োজন।
এই ধরনের উদ্যোগ যদি আরও বেশি হয়, তাহলে সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের দুঃখ-কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে। রমজানের শিক্ষা হলো মানবতার জয়গান গাওয়া— আজকের এই আয়োজন সেটিরই বাস্তব প্রতিচ্ছবি।