আমি আমার প্রতিটা অর্জনের পর কিছুদিন ঠিকমতো কথা বলতে পারি না, ‘কথা বলতে পারিনা’ বলতে আমি আমার আবেগ-ভাব প্রকাশ করতে পারিনা। কেমন যেনো এক যাদুকরী বুদ্বুদের মধ্যে ডুবে থাকি। আমার যেকোনো অর্জনকে ছোট কিংবা বড় হিসাব করার পরিমাপক যন্ত্র আমার কাছে নেই, কারণ আমি যেটাই করি আমার শতভাগ উজার করে করি, যার সাথে কোন ধরনের কম্প্রোমাইজ করি না, কোন অলসতা বা হাল্কা করে দেখার তো প্রশ্নই আসে না। আমি এতোটাই সেই কাজের মধ্যে ডুবে থাকি যে, সেই কাজ চলাকালীন সম্প্রতি নিজের মোবাইলটাও ব্যাবহার করি না , যেটাতে আমি কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমার মন ডিস্ট্রাক্ট হয়ে যেতে পারে। আমার ফোকাস এতোটাই মানসিক ভাবে প্রবল থাকে। তবে আমার সন্তানদের নিরাপত্তা প্রথম এবং তারপর আমার লক্ষ্যের দিকে যাত্রা।
এবার আসি ইউকে টপ মডেল প্রতিযোগিতা নিয়ে কিছু কথা। UK TOP MODEL হচ্ছে (UK & Worldwide) যুক্তরাজ্যের নাম্বার ওয়ান মডেল সার্চ প্রতিযোগিতা, যেখানে মূল পাঁচটি ক্যাটাগরিতে বয়স ভিত্তিতে সাতজন সেরা মডেল নির্বাচন করে সাতজন বিজয়ী ঘোষণা করা হয় ।
বছরব্যাপী প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি শেষে যখন চূড়ান্ত নিজ ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হিসাবে ঘোষণা দেয়া হয় , তখন কিছুদিন আনন্দে বাক্রুদ্ধ হয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক বৈকি। তারমধ্যে যদি ব্রিটিশ সকল চূড়ান্ত প্রতিযোগীদের মাঝে আয়ারল্যান্ড থেকে নির্বাচিত এক মডেলের জন্য আরও বেশি সৌভাগ্যের। যদিও আয়ারল্যান্ড থেকে ন্যাটিভ আইরিশ মডেলরা প্রতিবছরই এই টপ মডেল প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়, এই বছরও নিয়েছে, কিন্তু বিজয়ের ট্রফি আমি জিতে নিয়ে এসেছি।
একটা বিষয় আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতেই চাই, যুক্তরাজ্যে এই টপ মডেল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার পর প্রায়ই ভেবে উঠেছি, ” আচ্ছা, যুক্তরাজ্যে তো বাংলাদেশী বংশের চতুর্থ প্রজন্ম চলছে , উনারা কেন কখনো এই প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়নি ?”
আচ্ছা যাকগে, ওটা মূল বিষয় নয়, শুধুই একটি ভাবনা।
এবার বলতে চাই , এই ছবির পোশাকের পিছনের প্রেক্ষাপট নিয়ে, যেই পোশাক এবং স্টাইলের জন্য TOP MODEL Win করার পাশাপাশি আমি পেয়েছি ”পার্সোনাল স্টাইল” এ্যাওয়ার্ড।
”Warrior Queen” এর থিমে মেটাল ম্যাটিরিয়েলে বানানো এই ড্রেসটি ডিজাইন করেছেন আয়ারল্যান্ডের স্বনামধন্য ডিজাইনার ক্লেয়ার গারভি , যিনি দেশ-বিদেশে নানান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন তাঁর অনবদ্য সৃষ্টির জন্য। আমি এই ভদ্রমহিলার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ । আমার জীবনের সেরা অর্জনের মাঝে উনার নামটা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, আর সাথে থাকবে তাঁর নামটিও যিনি আমার এই পোশাকটির জন্য কাস্টমাইজড জুতো ক্রিয়েট করেছেন। কারণ এই ওয়ারিওর ড্রেসের সাথে যেকোনো জুতো মানাচ্ছিল না এবং ঠিক রং এর জুতা পাওয়া যাচ্ছিলো না। তখন এক দেবদূত এসে আমার স্ট্রেস হওয়ার পাল্লাটা হাল্কা করে দেয়। সেই দেবদূত হলেন আমার জনাব ডিম্পল সাহেব। আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে, তিনি নিজে এই জুতোর রং পুরো পরিবর্তন করে, নিজের হাতে সমস্ত ম্যাটারিয়াল কিনে, মেটাল বসিয়ে নতুন রূপ দিয়েছেন জুতোতে পোশাকের সাথে মানানসই হওয়ার জন্য। আমি কৃতজ্ঞ। সুতরাং এই ” পার্সোনাল স্টাইল ” এ্যাওয়ার্ডটি আসলে উনাদের ।
আরেকটা মজার চ্যালেঞ্জিং বিষয় শেয়ার করি, আমাদের গ্র্যান্ড ফিনালের গ্রিন রুমে চূড়ান্ত প্রতিযগিতাদের জন্য কোন ধরনের আয়না রাখা হয়নি, এবং প্রতিযোগীদের নিজেদের কাছেও কোন ধরনের মেকাপ প্রসাধনী রাখতে দেয়া হয়নি। অর্থাৎ আমাদের নিজেদের দেখার জন্য কোন আয়না ছিল না। চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস রাখতে হয়েছে মেকআপ আর্টিস্ট এবং হেয়ার স্টাইলিস্ট দের উপর। এবং উনারা আমাদের সেই বিশ্বাসের মর্যাদা পাই পাই করে রেখেছেন , তাদের নৈপুন হাত দিয়ে, আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
একজন মডেলের responsibility কি , commitment কেমন থাকা প্রয়োজন তা শিখিয়ে দেয় এই প্রতিযোগীতা।
মাই গড, লিখতে লিখতে কত লম্বা লেখা লিখে ফেললাম, আরও অনেক গল্প আছে , যা আরেকদিন আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য লিখবো ।
সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য , শুভ কামনা পাঠানোর জন্য। (ফেসবুক থেকে নেয়া )
উল্লেখ্য, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মিস আয়ারল্যান্ড ও মিস আর্থ মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি। তিনি একজন পাইলট।