সংশোধিত ওয়াকফ বিল প্রত্যাহারের দাবিতে চালতাবেড়িয়া জমিয়েত ওলামাহিন্দদের কর্মী ও সমর্থকরা জয়নগর থানার জয়নগর এক নম্বর ব্লকের বামনগাছি অঞ্চলের কাশিপুর মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ সোমবার বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দেশের ওয়াকফ বিল কে সংশোধন করার জন্য নতুন আইন পাশ করেছে । দেশের লোক সভা ও রাজ্যসভার ভোটের মধ্যে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠার জেরে ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাস হয়ে গেল। শনিবার রাষ্ট্রপতি নতুন ওয়াকফ বিল সই করেন। ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাস হওয়ার ফলে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ জন বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে থাকেন।
যখন কোন মুসলমান তার স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি আল্লাহর নামে ধার্মিক, দাতব্য ধর্মীয় উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে তখন ঐ জাতীয় সম্পত্তিকে ওয়াকফ সম্পত্তি বলে।
ওয়াকফ বোর্ড বর্তমানে ভারত জুড়ে 9.4 লক্ষ একর বিস্তৃত 8.7 লক্ষ সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণ করে যার আনুমানিক মূল্য 1.2 লক্ষ কোটি টাকা। বিশ্বের বৃহত্তম ওয়াকফ হোল্ডিং ভারতে রয়েছে।ভারতীয় রেলওয়ের পরে ওয়াকফ বোর্ড ভারতের বৃহত্তম জমির মালিক।
ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনায় সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জগুলি সমাধানের জন্য ওয়াকফ অ্যাক্ট, 1995 সংশোধন করা হয়। ভারতের ওয়াকফে্র ইতিহাস দিল্লি সালতানাতের প্রথম দিকের দিনগুলিতে খুঁজে পাওয়া যায়। সুলতান মুইজুদ্দিন সাম ঘোর মুলতানের জামে মসজিদের পক্ষে দুটি গ্রাম উৎসর্গ করেছিলেন এবং এর প্রশাসন শাইখুল ইসলামের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। ভারতে দিল্লি সালতানাত এবং পরবর্তীতে ইসলামি রাজবংশের বিকাশের সাথে সাথে ভারতে ওয়াকফ্ সম্পত্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।19 শতকের শেষের দিকে ভারতে ওয়াকফ্ বিলোপের জন্য একটি মামলা করা হয়েছিল । 1913 সালের মুসলিম ওয়াকফ বৈধকরণ আইন ভারতে ওয়াকফে্র প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করেছিল।ওয়াকফ্ অ্যাক্ট, 1954 - ওয়াকফ্ শুধুমাত্র স্বাধীনতা পরবর্তী শক্তিশালী হয়েছে। 1954 সালের ওয়াকফ্ আইনটি ওয়াকফে্র কেন্দ্রীকরণের দিকে একটি পথ প্রদান করে। সেন্ট্রাল ওয়াকফ্ কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া, একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা 1964 সালে ভারত সরকার 1954 সালের এই ওয়াকফ্ আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই কেন্দ্রীয় সংস্থাটি বিভিন্ন রাজ্য ওয়াকফ্ বোর্ডের অধীনে কাজ তত্ত্বাবধান করে যা ওয়াকফের ধারা 9(1) এর বিধানের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আইন, 1954।
ওয়াকফ অ্যাক্টকে 1995 সালে মুসলমানদের জন্য আরও অনুকূল করা হয়েছিল, যা এটিকে একটি ওভাররাইডিং আইনে পরিণত করেছিল। ওয়াকফ অ্যাক্ট, 1995 ভারতে ওয়াকফ সম্পত্তির (ধর্মীয় এনডাউমেন্ট) প্রশাসন পরিচালনার জন্য প্রণীত হয়েছিল। এটি ওয়াকফ কাউন্সিল, রাজ্য ওয়াকফ বোর্ড এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ক্ষমতা এবং কার্যাবলী এবং মুতাওয়াল্লির দায়িত্বগুলির জন্য প্রদান করে।2013 সালে সংশোধনী - ওয়াকফ্ ব্যবস্থাপনাকে আরও দক্ষ ও স্বচ্ছ করতে 2013 সালে আইনের কিছু বিধান সংশোধন করা হয়েছিল।ওয়াকফ আইন, 1995 সংশোধিত হিসাবে 8 ডিসেম্বর রাজ্যসভায় পেশ করা হয়েছিল, 2023।
ওয়াকফের ক্ষেত্রে সম্পত্তির মালিকানা ওয়াক্ফ্ থেকে আল্লাহর কাছে হস্তান্তরিত হয় এবং আল্লাহর কাছ থেকে সম্পত্তি ফেরত নেওয়া যায় না, তাই একবার কোনো সম্পত্তি ওয়াকফ হয়ে গেলে তা সর্বদা ওয়াকফ্ থাকবে, এটি অপরিবর্তনীয় হয়ে যাবে। একবার কোনো সম্পত্তি ওয়াকফ ঘোষণা করা হলে তা চিরকালই থাকে। বেঙ্গালুরু ঈদগাহ মাঠ, 1850 সাল থেকে ওয়াকফ সম্পত্তি হিসাবে দাবি করা হয়েছে। সুরাট মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন বিল্ডিং, মুঘল যুগে হজের সময় সারাই হিসাবে ঐতিহাসিক ব্যবহারের কারণে দাবি।
সব ইসলামী দেশে ওয়াকফ সম্পত্তি নেই। তুরস্ক, লিবিয়া, মিশর, সুদান, লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান, তিউনিসিয়া এবং ইরাকের মতো ইসলামিক দেশগুলিতে ওয়াকফ নেই। ভারতে, ওয়াকফ বোর্ডগুলি শুধুমাত্র বৃহত্তম শহুরে জমির মালিক নয়, তাদের আইনগতভাবে তাদের রক্ষা করার জন্য একটি আইনও রয়েছে।ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে নিবন্ধিত 356, 051টি ওয়াকফ এস্টেট রয়েছে।
ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে নিবন্ধিত 872,328টি স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে।ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে নিবন্ধিত 16, 713টি অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে।ওয়াকফ্ বোর্ডের এখন পর্যন্ত 330000টি ডিজিটালাইজড রেকর্ড রয়েছে।মোকদ্দমা এবং অব্যবস্থাপনা: ওয়াকফ আইন, 1995 এবং এর 2013 সংশোধনী অকার্যকরতার জন্য সমালোচিত হয়েছে।
ওয়াকফ আইনের ধারা 40 ব্যাপকভাবে একটি সম্পত্তি অধিগ্রহণ এবং সম্পত্তি হিসাবে ঘোষণা করার জন্য অপব্যবহার করা হয়েছিল। এটি শুধুমাত্র বিপুল সংখ্যক মামলাই নয়, সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈষম্যও সৃষ্টি করেছে।
ওয়াকফ্ আইন দেশের শুধুমাত্র একটি ধর্মের ধর্মীয় সম্পত্তির জন্য একটি বিশেষ আইন, যখন অন্য কোনো ধর্মের জন্য এই ধরনের কোনো আইন নেই।প্রস্তাবিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল ইস্যুতে জমিয়তের ওলামা হিন্দের১০ এপ্রিল মহা সমাবেশে ডাক দিয়েছে
রাজ্য জমিয়তে উলামার হিন্দের সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী মাওলানা সিদ্দীকুল্লাহ চৌধুরী । মাওলনা হাবিবুর রহমান বলেন আমাদের আন্দোলন সারা রাজ্য জুড়ে চলবে। তিনি দাবি করেন আমাদের (মুসলমানদের) বাদ দিয়ে ভারতবর্ষ চলবেনা , চলবেনা,। পশ্চিমবঙ্গের তিন টি খুঁটি, তার মধ্যে মুসলমানরা একটি খুঁটি। আমরা হলাম বাংলার খুঁটি ।
তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের ও রাজ্য সরকারের কাছে দাবি জানালেন সাম্প্রদায়িকতার বিভাজন যাতে না ঘটে তার জন্য অনুরোধ করলেন। কিন্তু যাদের টুপি মাথায় যাদের মুখে দাড়ি আছে যারা নামায আদায় করে এরা কোনদিন জঙ্গি হয়না,হযনা, কখনো হবেনা। তিনি বলেন যার আল্লাহ আছে তার সব আছে।তিনি বিধায়ক ও সাংসদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা এই বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুন। কিন্তু আমরা কোন লুকোচুরি খেলা খেলতে দেনা।ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আমরা কে হিন্দু,কে মুসলিম,কে শিখ এটাই জানতাম না।এই বিজেপি সরকার ক্ষমতা আসার পর থেকে এই বিভাজন সরকারের একটা ইস্যু । আমি কেন্দ্রীয় সরকারের জানিয়ে দিতে চাই তুমি যতই খেলাই খেলো না আমরা ভারতবর্ষের হিন্দু মুসলমান বিশেষ করে বাংলার হিন্দু মুসলমানদের ঐক্য একান্ত ভ্রাতৃত্ব ভালোবাসা শুধু আছে যা চিরকাল থাকবে। কখনো ফাটল ধরাতে পারবেন না।সভায় উপস্থিত ছিলেন
হাফেজ মাওঃ মোঃ লিয়াকত লস্কর সাধারণ সম্পাদক,অল বেঙ্গল ইমাম মুয়াজ্জিন অ্যাসোসিয়েশন এন্ড চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, জয়নগর 1 ব্লক ,মাওঃ হাবিবুর রহমান সাহেব,চালতা বেড়িয়া ব্লক জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ,মুফতী আতিকুর রহমান সাহেব,সাধারণ সম্পাদক চালতা বেড়িয়া ব্লক জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ,মাওঃ শহিদুল্লাহ সাহেব, সভাপতি চালতা বেড়িয়া ব্লক জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ,জনাব আফতাব উদ্দিন সাহেব ক্যাশিয়ার চালতা বেড়িয়া ব্লক জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ,চালতাবেড়িয়া ব্লক জমিয়েত বিভিন্ন মসজিদের ইমাম সহ বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ