কুড়িগ্রামের চিলমারীতে উপজেলার এক সংবাদ কর্মীকে হুমকি দিয়ে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে, ছবি ও ভিডিও ডিলিট করার অভিযোগ ওঠার পর। এ নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন জেলা পুলিশ কুড়িগ্রাম। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাতে জেলা পুলিশের মিডিয়া অফিসার ও গোয়েন্দা শাখার ওসি বজলার রহমান স্বাক্ষরিত একটি লিখিত বিবৃতি গণমাধ্যম কর্মীদের সরবরাহ করা হয়েছে। বিবৃতিতে সাংবাদিকের মোবাইল ফোনের ভিডিও ডিলিট করার অভিযোগ স্বীকার করলেও পুলিশ দাবি করেছেন। আমরা মিডিয়াকে আঘাত করে কোনও শব্দ উচ্চারণ করিনি। বিবৃতিতে পুলিশ দাবি করেছেন, ‘অভিযানের তথ্য ফেসবুকে ফাঁস হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় ভিডিও ডিলিট করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।’ এ ছাড়াও ঐ তরুণের সাংবাদিক পরিচয় জানা ছিল না, বলে দাবি করেছেন কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ। পুলিশের লিখিত বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, কুড়িগ্রামের চিলমারী ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার লোকদের মধ্যে উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাতে জেলা পুলিশের একটি ‘চৌকস’ টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনার সময়, একজন অজ্ঞাত উৎসুক তরুণ গোপন অভিযানের ভিডিও ধারণ শুরু করেন। ঐ তরুণ নাম-পরিচয় না দিয়েই ভিডিও ধারণ করতে থাকেন। অভিযানের তথ্য ফেসবুকে ফাঁস হতে পারে আশঙ্কা করে, তার মোবাইল থেকে ভিডিওটি ডিলিট করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে পুলিশ আরও দাবি করেছেন, ঐ সাংবাদিকের পরিচয় আমাদের জানা ছিল না। পুলিশ ও মিডিয়া পরস্পর বন্ধু, আমরা মিডিয়াকে আঘাত করে কোনও শব্দ উচ্চারণ করিনি। একটা নির্জলা মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে। আমরা পরে তার পরিচয় জানতে পেরে, শনিবার সাংবাদিক ভাইদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভায় তাকে (ভুক্তভোগী সাংবাদিককে) আমন্ত্রণ জানিয়েছি। বিবৃতির শেষাংশে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ভুলভাবে প্রকাশ করায় বিষয়টি নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। তাই সকল সংবাদকর্মী ভাইদের সত্য ঘটনা প্রকাশ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। বিবৃতিতে অসংগতি: বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর সেসব প্রতিবেদনকে ‘ভুলভাবে প্রকাশ’ বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও বিবৃতির স্বপক্ষে কোনও প্রমাণ পুলিশ দিতে পারেনি। বিবৃতিতে উল্লেখ করা বেশ কিছু দাবির বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন বাংলা ট্রিবিউন। তাতে বেশ কিছু অসংগতি পাওয়া গেছে। বিবৃতিতে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে চিলমারীর বিবাদমান এলাকায় ‘অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযানের’ দাবি করলেও অস্ত্র উদ্ধারের কোনও তথ্য উল্লেখ করেনি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অল্প সময় পর ফিরে আসেন। রাতে সেখানে কোনও অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। আর যেখানে দিনের বেলা সেনাবাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হয়েছিল। সেখানে রাতের বেলা পুলিশ একক ভাবে অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করার দাবি করায় এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সুপারের ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে সেখানে থাকা রমনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আকা বলেন, ‘পুলিশ সুপার এসে ইউনিয়নের দুই থানার মোড় ও সুন্দরগঞ্জের শহর মোড় সীমান্তে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। কিন্তু সে সময় কোনও অভিযান পরিচালনা হয়নি। আমি সেখানেই ছিলাম। কোনও অস্ত্র উদ্ধার করতে ও দেখিনি। পরে এমন কোনও সংবাদও পাইনি বলে জানান। বিবৃতিতে পুলিশ দাবি করেছেন, তারা সাংবাদিকের পরিচয় জানতেন না। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম সাদ্দাম দাবি করেছেন, ‘আমি ভিডিও ধারণ করছিলাম। পুলিশ সুপার আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, এই তুমি কে? আমি নিজেকে মিডিয়াকর্মী পরিচয় দিই। সঙ্গে সঙ্গে এসপি খেপে যান। তার গানম্যানকে বলেন, ওর মোবাইল কেড়ে নাও। মিডিয়া ছুটায় দেবো, চেনো আমাদের, এরপর তার গানম্যান আমার মোবাইল নিয়ে ছবি ও ভিডিও ডিলিট করে দেন বলে জানান তিনি। বিবৃতিতে সাংবাদিকের পরিচয় না জানা এবং ভিডিও ডিলিট করার ‘পরামর্শ’ দেওয়া প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী সাংবাদিক সাদ্দাম বলেন, আমি আগে নিজের পরিচয় দিয়েছি।
তারা আমাকে বললে ভিডিও করতাম না। কিন্তু পরিচয় দেওয়ার এরপরও এসপির নির্দেশে তার গানম্যান মোবাইল কেড়ে নিয়ে ছবি ও ভিডিও ডিলিট করে দিয়ে ফোন ফেরত দিয়েছেন। আমার পরিচয় না জানা নিয়ে পুলিশের দাবিটি সঠিক নয়। বিষয়টি মিডিয়াতে প্রকাশ হলে শুক্রবার রাতে এসপির গানম্যান ফোন করে ভুল স্বীকার করেছেন। তিনি এসপির বরাতে তার দফতরে চায়ের দাওয়াত দিয়েছেন। কিন্তু আমি যাবো কিনা তা এখনো ঠিক করি বলে জানান ভুক্তভোগী সাংবাদিক সাদ্দাম।