নিষিদ্ধ অ্যাপের মাধ্যমে পরিচয়, দুই মাসের পরিচয়ে নগ্ন অবস্থায় কথাবার্তার মহুর্ত ধারণ করে সুমাইয়াকে ব্ল্যাকমেইল করতেন সাজ্জাদ। এ পরিস্থিতি থেকে নিস্তারের জন্য সুমাইয়া তার স্বামীর সাথে পরামর্শ করে সাজ্জাদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে হত্যার পর লাশ ৯ টুকরা করে কার্টুনবন্দী অবস্থায় কেরানীগঞ্জ ও পদ্মা সেতুর কাছে ফেলে দেয়। ক্লুলেস এ হত্যার রহস্য উদঘাটন করে খুনীদের গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
শনিবার (১২ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন। এর আগে গ্রেপ্তারদের আদালতে পাঠানো হলে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।
পুলিশ জানায়, গত ৩ মার্চ সাভারের হেমায়েতপুর যাদুরচর এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় সাজ্জাদ হোসেন সবুজ (২৬) পিতা ইউসুফ আলীর ছেলে। ৪ মার্চ সকালে কেরানীগঞ্জের সড়কের পাশে কাটুন পরে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশ কে খবর দেয়। পুলিশ কাটুন খুলে দেখতে পায় দুইটি কাটুনে কয়েক টুকরো মরদেহ । এর পরেই পদ্মা সেতুর কাছে আরও একটি কাটুনে টুকরো টুকরো লাশের অংশ পাওয়া যায়। সাভার থেকে নিখোঁজ হওয়া যুবকের পরিবার সাভার মডেল থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করলে বিষয়টি নজরে আসে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের। সেই জিডির সূত্র ধরে পরিবার নিখোঁজ যুবকের খন্ডিত টুকরো দেখে লাশের পরিচয় সনাক্ত করে।
টুকরো লাশের পরিচয় সনাক্ত হওয়ার পরেই র্যাব, সিআইডি, ডিবি, পুলিশ এবং পিবিআই হত্যা রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালাতে থাকে। পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় এক নারীর সন্ধান পায়। সেই নারীকে গ্রেফতার করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাতে থাকে। গত ৮ এপ্রিল দুপুরে ফেনী থেকে সেই নারী গাবতলী এসে একটি কাউন্টারে অবস্থান করছিলো কুষ্টিয়ার জিবন নগর যাওয়ার জন্য। পিবিআইয়ের একটি দল সেই নারীর পিছু নিয়ে চুয়াডাঙ্গার একটি বাসে উঠে। রাত ১ ঘটিকার সময় চুয়াডাঙ্গা গাড়িটি পৌচ্ছালে ওই নারী ও তার এক আত্মীয় গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথেই পিবিআই তাদের দুইজন কে আটক করে। আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে সেই নারী মুল অভিযুক্ত পলাশের সাথে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান। এবং পিবিআইয়ের কয়েকটি দল নারীর দেখানো মতে পলাশের খালু বাড়ি থেকে পলাশ কে গ্রেপ্তার করে রাতেই ঢাকার উদ্দ্যেশে রওনা হয়।
ঢাকা জেলা পিবিআইয়ের পরির্দশক মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জালাল উদ্দীন বলেন, টুকরো টুকরো মরদেহ সাজ্জাদ হোসেনের সাথে সুমাইয়া আক্তারের প্রায় দুই মাস আগে পরিচয় হয় নিষিদ্ধ অ্যাপের মাধ্যমে।নগ্ন ভিডিও ধারন করে সাজ্জাদ হোসেন সুমাইয়াকে ব্লাকমেইল করছিলো। সেই ক্ষোভে সুমাইয়া তার কথিত স্বামী কে বিষয় টি বললে তারা দুইজন মিলে সাজ্জাদ হোসেন কে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী সুমাইয়া গত ৩ মার্চ মোহাম্মদপুরের মুলঘাতক রোকনুজামানের ভাড়া বাসায় ডেকে নিয়ে সুমাইয়া ও মুলঘাতক দুইজন মিলে ধারালো ছুরি দিয়ে সাজ্জাদ হোসেন কে হত্যার পর টুকরো টুকরো করে সারাদিন। এবং রাতের আধারে দুইজন মিলে তিনটি কাটুনে করে কেরানীগঞ্জ শাক্তা ইউনিয়নের একটি হাসপাতালের পাশে সড়কে টুকরো টুকরো মরদেহ ভর্তি দুইটি কাটুন ফেলে দেয় এবং আরেকটি কাটুন পদ্মা সেতুর কাছে ফেলে চলে আসে। গত ১০ এপ্রিল ঢাকার চীফ জুডিশিয়াল আদালতে দুইজনই ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করলে আদালত দুইজনকেই জেলহাজতে পাঠিয়ে দেয়।১৩-০৪-২০২৫