– মোয়াজ্জেম চৌধুরী………
“ক্ষমতা আর টাকার গরম দেখাবেন না! রাজার রাজ প্রাসাদও একসময় ভেঙ্গে পড়ে”—এই কথার মাঝে যে সতর্কবার্তা লুকিয়ে আছে, তা শুধু ব্যক্তিগত জীবনের জন্য নয়, সমাজ, রাষ্ট্র ও ইতিহাসের প্রতিটি পরতে পরতে প্রাসঙ্গিক। সময়, ইতিহাস এবং জনগণ—এরা কাউকে চিরস্থায়ী কিছু দেয় না। আজ যার রাজত্ব, কাল তার পতন। আজ যার অগাধ সম্পদ, কাল তার নিঃস্বতা।
ক্ষমতা ও টাকার মোহে অন্ধ হয়ে গেলে মানুষ নিজেকে অপরাজেয় মনে করে। অথচ ইতিহাস বলে, যত বড় শাসকই হোন না কেন, ক্ষমতার অপব্যবহার তাদের পতনের পথ তৈরি করে দিয়েছে।
বাস্তব উদাহরণ জেনে রাখা ভালো :
১. রোমান সাম্রাজ্য – একসময় গোটা ইউরোপে আধিপত্য বিস্তার করেছিল রোম। কিন্তু অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি, ক্ষমতার লোভ আর বিলাসিতার জন্য ধ্বংস হয়ে যায় সেই বিশাল সাম্রাজ্য।
২. সাদ্দাম হোসেন – ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট ছিলেন অগাধ ক্ষমতার অধিকারী। তিনি বছরের পর বছর শাসন করেছেন ভয় দেখিয়ে ও দমননীতির মাধ্যমে। কিন্তু শেষমেশ ক্ষমতার অপব্যবহারই তাকে টেনে নামিয়েছে মাটিতে। বিচারে মৃত্যুদণ্ড হয়েছে তার।
৩. হিটলার – ইতিহাসের এক ভয়ঙ্কর নাম। টাকার জোর, ক্ষমতার দম্ভ আর উগ্র জাতীয়তাবাদের খোলসে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তার নিজের জীবনও রক্ষা পায়নি সেই অহংকার থেকে।
৪. বাংলাদেশের বাস্তবতা – আমাদের দেশেও বহু নেতা-মন্ত্রী, প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন যারা ক্ষমতা ও অর্থের জোরে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। আজ তারা কেউ জেলে, কেউ বিদেশে পলায়নপর, কেউ জনসমর্থনহীন।
পরিশেষে বলা যায়,
জীবন ক্ষণস্থায়ী, ক্ষমতা সাময়িক, অর্থ নশ্বর। মানুষের মূল্য নির্ধারিত হয় তার আচরণ, মূল্যবোধ ও দায়বদ্ধতার মাধ্যমে। কাজেই, কেউ যখন ক্ষমতায় থাকেন বা অর্থবিত্তের অধিকারী হন, তখন তার উচিত সেটাকে মানুষের সেবায় ব্যবহার করা। দম্ভতা দেখানোর জন্য নয়।
আমরা সবাই যদি এই শিক্ষাটা নিতে পারি, তাহলে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী
কবি, লেখক, গবেষক, কলামিস্ট, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী। মৌলভীবাজার, সিলেট, বাংলাদেশ।
ইমেইল – pressmuazzambd@gmail.com