রূপগঞ্জ প্রতিনিধি:-
“ অনেক দিন ধরেই ব্রিজটার দুর্বস্থা। কেউ এটা মেরামতও করে দেয় না। আবার নতুন বানিয়েও দেয় না। হাতলগুলো নিজে নিজেই খসে পড়ছে। ছোট্ট একটা গাড়ী গেলেই ব্রিজ কাঁপে। মনে হয় এই বুঝি ভাঙ্গিয়া পড়িল। নদী পথে চলাচলকারী বালু ও পন্যবাহী জাহাজের ধাক্কায় বিকট আওয়াজে কেঁপে ওঠে। এছাড়া পিলারের পলেস্টার খসে রড বেরিয়ে গেছে। তবু কেউ এটার খবর নেয় না। মনে হয় এ ব্রিজের কোনো অভিভাবক নেই। বড় ধরনের দুর্ঘটনায় ক্ষতি হওয়ার পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে। তখন আর কিছুই করার থাকবে না।” কথাগুলো বলছিলেন ব্রিজের পাশেই বসবাসকারী ফাতেমা আক্তার ¯িœগ্ধা।
মীরপাড়া এলাকার ৬ বছরের ছোট্ট শিশু আরাফ হোসেন বলেন, “ওই পাড়ে আমার নানীর বাড়ি। আমি ভয়ে বেড়াতেও যাই না। যদি ব্রিজটা ভেঙ্গে যায়। গাড়ী নদীতে পড়ে যায়।” চরম ঝুঁকিতে রয়েছে ডেমড়া-চনপাড়া সেতু। যে কোনো সময় সেতু ধ্বসে পড়ার সঙ্কায় রয়েছেন যানবাহন চালক ও পথচারীরা। নির্ধারিত ৬০ বছর সময় মেয়াদের আগেই সেতুটির নড়বড়ে অবস্থা। এ সেতু দিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসীরা। সেতুটি এত ঝুঁকিপূর্ণ থাকার পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়সাড়াভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন। ঝুঁকিপূর্ণ সাইনবোর্ড টানিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায় ১৯৯১ সালে প্রায় ১ কোটি দশ লাখ টাকা ব্যায়ে বালুনদের উপর ডেমড়া-চনপাড়া এলাকায় এ সেতুটি নির্মান করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১১০ ফুট, প্রস্থ ১২ ফুট। রাজধানী ঢাকার সাথে পাশর্^বর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালিগঞ্জের যোগাযোগের সুবিদার্থে বালু নদের উপর ডেমড়া-কালিগঞ্জ সড়গের চনপাড়া এলাকায় নির্মিত হয় এ সেতু। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে ৬০ বছর মেয়াদী চুক্তিতে নির্মান করা হলেও ৩৪ বছরেই সেতুটির ভঙ্গুর দশা। যে কোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা যায়, ২০০০ সালের দিকে একবার সেতুটির নিচে ফাটল দেখা দেয়। ওই সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। পরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করায় সে যাত্রায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় মানুষ। পুনরায় ২০১২ সালে সেতুর পিলার ও বিভিন্ন অংশের পলেস্তার খসে পড়ে। খবর পেয়ে সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে বড় যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সেতুর সামনে সাইন বোর্ড টানিয়ে দেয়া হয় বেশ কিছু দিন ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও পরে পুনরায় ভারী যানবাহনসহ সব ধরনের যান চলাচল শুরু করে।
নদীতে চলমান ট্রলারের ধাক্কায় সেতুর চারটি পিলার, ভিম ও রেলিংয়ের বিভিন্ন অংশের পলেস্তার ভেঙ্গে পড়েছে। স্থানীয় সিএনজি চালক লোকমান হোসেন বলেন, এই সেতু পার হওয়ার সময় এই ভেবে বুকটা কেঁপে ওঠে এই বুঝি সেতু ভাঙ্গিয়া পড়িল। ছোট্ট একটা গাড়ী গেলেই সেতু কেঁপে ওঠে। মনে হয় গাড়ী ঘোড়াসহ ব্রীজ ভাঙ্গিয়া এখনই নদীতে পড়ল।এলাকাবাসীরা জানান, প্রতিদিন এ সেতু দিয়ে হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। এছাড়া এ সেতুই রাজধানী ঢাকার সঙ্গে রূপগঞ্জের পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম।
এদিকে বালু নদ দিয়ে প্রতিদিন রাত সারাক্ষণ বালু বোঝাই বাল্কহেড ও মালবাহী ট্রলার চলাচল করে। এসব বাল্কহেডের ধাক্কায় সেতুর পিলারগুলো ভেঙ্গে গেছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় এলাকাবাসীরা। এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মেহমুদ মুরশেদ উল আল আমিন বলেন, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বার বসানো হয়েছে। যাতে যান চলাচল করতে না পারে। কে বা কারা রাতের আঁধারে এগুলো চুরি করে নিয়ে যায়। সেতুটি নতুন করে নির্মাণের জন্য আবেদন করা হয়েছে। পাস হয়নি। কবে হবে তাও জানা নেই। এছাড়াও বিআইডব্লিউর আপত্তির কারনেও এ সেতুর নির্মাণ কাজে বিঘœ হচ্ছে।ডেমড়া-চনপাড়া সেতুটি র্দীঘ দিন ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় রয়েছে, সংস্কার বা পুনঃনির্মাণ হচ্ছে না কেন, এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টা আমার জানা নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্ঠা করব। আশা করি খুব শীঘ্রই আলোর মুখ দেখবে সেতুটি।