Crime News tv 24
ঢাকাবুধবার , ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
  1. অন্যন্য
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. খেলা
  5. জাতীয়
  6. দেশজুড়ে
  7. ধর্ম
  8. ফিচার
  9. বাংলাদেশ
  10. বিনোদন
  11. মতামত
  12. রাজনীতি
  13. রান্না
  14. রাশিফল
  15. লাইফস্টাইল
আজকের সর্বশেষ সবখবর

শীতের শুরুতেই চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জে জমে উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের হাট।

admin
ডিসেম্বর ১১, ২০২৪ ১:৫৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সুজন আহমেদ নিজস্ব প্রতিবেদক:-

চুয়াডাঙ্গা জেলা শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই সরোজগঞ্জ বাজার। সরোজগঞ্জ বাজারে মেইন সড়কে চাররাস্তার মোড় থেকে একটু ভেতরে সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সারি সারি সাজানো গুড়ের ভাঁড়। সেইসঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতা ও শ্রমিকদের কর্মযজ্ঞ। শীতের শুরুতেই প্রতিবছরের মতো এবারও দেশের বৃহৎ ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের হাট জমে উঠেছে সরোজগঞ্জে। গুড় কিনতে বিভিন্ন জেলা থেকে আসছেন বেপারিরা। প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও শুক্রবার বসে এই গুড়ের হাট। খেজুরগাছ থেকে সংগ্রহ করা রস দিয়ে তৈরি করা ঝোলাগুড় ও নলেন পাটালি বেচাকেনার জন্য এই হাটের ঐতিহ্য কয়েকশ’ বছর ধরেই। সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের সরোজগঞ্জে, চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘেঁষে স্থানীয় সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে এ হাটের অবস্থান।সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। প্রতি সপ্তাহে প্রায় দুই কোটি টাকার গুড় কেনাবেচা হয় এই হাটে। মাটির হাড়ির বা ভাঁড়ের আকার ও ওজন ভেদে দাম ওঠানামা করে। মান ভেদে একভাঁড় গুড় বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে শুরু করে ২ হাজার বা ২ হাজার ২শত টাকা পর্যন্ত দাম চলছে, তবে প্রত্যেকটি গুড়ের ভাঁড়ের আকার ওজনের ভেদে বিক্রয় হচ্ছে । স্বাদে ও গন্ধে এখানকার গুড় অতুলনীয়। অন্যান্য বারের তুলনায় এখানকার খেজুর গুড়ের চাহিদা বেশি থাকায় দামও বাড়ছে। পুরো এলাকাজুড়ে সাজানো খেজুর গুড়ভর্তি মাটির ভাঁড় ও ছোট ছোট ধামা-কাঠায় নলেন পাটালি। ক্রেতা-বিক্রেতারা তা দাঁড়িয়ে দেখছেন। দরদাম ঠিক হলে বেপারীরা শতশত গুড়ের ভাড়সহ কিনছে এবং ব্যাপারীদের চাহিদা অনুযায়ী গুড় কেনা হলে তা বিভিন্ন যোগাযোগ বহন গাড়ি বা ট্রাকে ভর্তি করেন,গাড়িযোগে এই হাট থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে বেপারীরা গুড়ের গাড়ি গুলো পাঠিয়ে দেয় । আবার কেউ কেউ নিজের বাড়ি বা আত্মীয়ের বাড়ি পাঠানোর জন্য চাহিদা অনুযায়ী কিনছেন। হাটের প্রবেশপথের দু’ধারে বসে কৃষক /গাছিরা, ধামা-কাঠায় করে তাদের বাড়িতে তৈরি পাটালি বিক্রি করছেন। পাটালির দোকান পার হয়ে ভেতরে যত যাওয়া যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ততই চোখে পড়ে সারি সারি সাজানো গুড়ের ভাঁড়। সেইসঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতা ও শ্রমিকদের কর্মযজ্ঞ। হাটের একাধিক স্থানে দাঁড়িপাল্লায়/ স্কেলে গুড় মেপে হাটে ভেড়ানো ট্রাকগুলোতে গুড়ের ভাঁড় তুলে সাজানো হয়। পুরোদমে অগ্রায়নের শুরু থেকেই আগামী চৈত্র মাস পর্যন্ত চলবে গুড় ও গুড়েরপাটালি বেচাকেনা। স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর শীত মৌসুমে সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেজুর গুড়ের বেচাকেনা হয় এ হাটে। স্বাদে ও গন্ধে এখানকার গুড় অতুলনীয়। মৌসুমের প্রায় পুরো সময়জুড়েই হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে জমজমাট থাকে এই হাট। স্থানীয় পাইকার, মহাজন এবং বিভিন্ন মোকাম থেকে আসা ব্যাপারীরা এমনটাই দাবি করেন।দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গুড় কিনতে সরোজগঞ্জের হাটে আসেন ব্যাপারীরা। ঢাকার কারওয়ান বাজার, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, চট্টগ্রাম, সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই গুড়ের বেপারীরা পাঠিয়ে দেন। ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে গুড় কিনতে এসেছেন শহীদ হাসান। তিনি জানান, দেশের অন্যান্য হাটে এখানকার চেয়ে কম দামে গুড় পাওয়া যায়। তবে, সেসব গুড়ে চিনি মেশানো থাকে বলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা কেউ তা কেনেন না। বেশি দাম জেনেও ব্যাপারীরা ভালো গুড় কিনতে চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জেই ছুটে আসেন। তিনি আরও জানান, আগের হাটের তুলনায় গুড়ের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ১২ থেকে ১৪ কেজি ওজনের এক জোড়া গুড়ের ভাঁড় ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২শত টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।সরোজগঞ্জ গুড়ের হাটে গুড় বিক্রি করতে আসা চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কালুপোল গ্রামের গাছি জহুরুল হক জানান, গত দুই দশক ধরি এই হাটে গুড় নিয়ে আসি। আমাদের কাছ থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারীরা গুড় কিনে নিয়ে যায়। তবে, গুড়ের ভাড়ের দাম অনেক বেড়েছে । যার কারণে অনেক সময় কম লাভ হচ্ছে।
তবে বর্তমান সময়ের অস্থায়ী সরোজগঞ্জ বাজার শাখা কমিটি ও জামায়েত ইসলামীর বাজার কমিটির সভাপতি মামুন হাওলাদার ও পূর্বের বাজার কমিটির সদস্য এবং জামায়েত ইসলামীর সহ সেক্রেটারি আব্দুল মালেক জানান, এ হাট থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয় গুড়।

প্রতি হাটের দিন গড়ে ২৫০ টন খেজুর গুড় বিক্রি হয়। যার বিক্রয়মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। সরোজগঞ্জ হাটে বিক্রি হওয়া বেশির ভাগ গুড়ই এলাকার কৃষকেরা/গাছিদের বাড়িতে যত্নের সঙ্গে তৈরি করেন। এতে চিনি বা কোনও রাসায়নিক নেই। কিছুটা খয়েরি রঙের হলেও এসব গুড় পুরোটাই খাঁটি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বর্তমানে এ জেলায় দুই লাখ ৫০ হাজারের মতো খেজুরগাছ রয়েছে। যার প্রায় অর্ধেকই সদর উপজেলায়। প্রতি মৌসুমে গড়ে ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদিত হয়। জেলা সদরের কুতুবপুর ইউনিয়নের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুপারভাইজার মোস্তাফিজুর রহমান, সিএনটিভিকে জানান, মৌসুমে প্রতিটি গাছ থেকে অন্তত ১০ কেজি গুড় পাওয়া যায়। সে হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদিত হয়। চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ হাট খেজুর গুড়ের প্রধান মোকাম। গুড়ের বেপারী ও গাছিরা জানিয়েছে, প্রতি বছর, বছর খেজুরের গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে, খড়ি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন ইটের ভাটাতে। নতুন করে কোন কৃষক বা গাছিরা খেজুর গাছ রোপণ বা লাগাচ্ছে না এছাড়াও গাছিরা জানিয়েছেন বর্তমান সময়ে গাছ কাটার লোকজন স্বল্প থাকাই এবং পূর্বে বাপ দাদারা খেজুরের গাছ কেটে আসছে, এখনকার সময়ের লোকজন খেজুর গাছ কাটছে না। যার কারণে প্রতি বছরে বছরে কমে যাচ্ছে খেজুরের গাছ কাটা, কমছে গুড় উৎপাদন। যার ফলে প্রতি কেজি গুড়ের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গুড় ও পাটালি উৎপাদন কম, তবে চাহিদা বেশি।