গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির:-
ইসলাম হচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম। এখানে কি নেই, দিনের শুরু থেকে রাত অবধি চলার বিধিবদ্ধ সকল নিয়ম কানুন এমন কি দুনিয়া-আখিরাতের মঙ্গল অমঙ্গল থেকে শুরু করে ভাল-মন্দ সব বিষয়ে যথাযথ পথের দিশা রয়েছে ইসলামে ,আল হামদুলিল্লাহ।
ইসলামে দায়িত্ব পালনে আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও যোগ্যতা প্রয়োগের মাধ্যমে কাজ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আন্তরিকতা ও যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করা প্রত্যেক মুমিনের একান্ত কর্তব্য। পবিত্র কোরআনের সুরা কাসাস-এর ২৬ আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম কর্মী, যে শক্তিমান ও দায়িত্বশীল’। দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অসচেতনতার কারণে যে কোনো সময় যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দায়িত্বে অবহেলার কারণে কিয়ামত দিবসে মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে। হাদিস শরিফে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.) এরশাদ করেন, ‘মনে রেখো, তোমরা মুমিন তাঁর সব কাজকর্মই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করেন। আল্লাহর ভয়ে দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করেন। কারণ মুমিন বিশ্বাস করেন, তাঁর ভালো-মন্দ সব কাজের জন্য ফল ভোগ করতে হবে।
সবাই দায়িত্বশীল। আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। শাসক তাঁর প্রজাদের দায়িত্বশীল, তিনি তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবেন। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, সে তার পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নারী তার স্বামীর পরিবার ও সন্তানদের প্রতি দায়িত্বশীল, সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ক্রীতদাস তার মনিবের সম্পদের দায়িত্বশীল, সে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। সাবধান, তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সহিহ বুখারি)।
জীবনের সর্বক্ষেত্রে সবসময় পিতামাতার আদেশ-নিষেধ মান্য এবং তাদের সঙ্গে সৌজন্যময় আচরণ করা কর্তব্য। এ ছাড়া পরিবারের অন্যান্য সদস্য, আত্মীয়স্বজনের প্রতি দায়িত্ব পালনের বিশেষ দিকনির্দেশনা ইসলামে রয়েছে। পাড়া-প্রতিবেশীর বিপদ- আপদে সাহায্য-সহযোগিতা করা এবং প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেওয়া মুমিনের একান্ত কর্তব্য।
কর্মজীবনে মালিকপক্ষ কর্তব্যরত শ্রমিকদের সঙ্গে অবশ্যই উত্তম ব্যবহার করবে। আর শ্রমিক-কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানের মালিকের কাজকর্মে কোনো রকম ফাঁকি দেবে না। কর্মচারীরা মন- প্রাণ দিয়ে কাজকর্ম সম্পাদন করবে, আর মালিকপক্ষ শ্রমিকদের নির্ধারিত পারিশ্রমিক সঠিকভাবে প্রদান করবে। সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের চাকরি বা কর্মক্ষেত্রে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করা এক ধরনের আমানত, যা রক্ষা করা সবার জন্য
অবশ্য কর্তব্য। ইসলামে আমানতের পরিধি অনেক প্রসারিত। চাকরিজীবীদের কাজের সময়টুকুও আমানত হিসেবে গণ্য। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সুরা মুমিনুনের ৮ আয়াতে এরশাদ করেন, ‘মুমিনদের অনন্য একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।’ হাদিস শরিফে বর্ণিত, হযরত আনাস (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) এক ভাষণে বলেছেন যে, ‘যার মধ্যে আমানতদারি নেই তার ঈমান নেই। আর যার মধ্যে প্রতিশ্রুতি রক্ষার নিয়মানুবর্তিতা নেই, তার ধর্ম নেই।(মুসনাদে আহমদ) ।
দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। কারও দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অবহেলা নানা ধরনের বিপদ, দুর্ঘটনা ও বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আমরা বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ও বিপর্যয় লক্ষ্য করি, যার অধিকাংশই ঘটে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের দায়িত্ব বা কর্তব্যে অবহেলার দরুন। মুমিন বান্দা তাঁর সব কাজকর্মই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করেন। আল্লাহর ভয়ে দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করেন।
কারণ একজন মুমিন বিশ্বাস করেন, তাঁর ভালো-মন্দ সব কাজের জন্য ফল ভোগ করতে হবে। মহান আল্লাহ এ বিষয়ে সুরা জিলজাল এর ৭-৮ আয়াতে এরশাদ করেন, ‘কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা সে কিয়ামতের দিন দেখতে পাবে। আর কেউ অণু পরিমাণ মন্দ কর্ম করলে তাও সে দেখতে পাবে।’ সবাই যদি নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পরকালে জবাবদিহির অনুভূতি নিয়ে পালন করি , তাহলে রাষ্ট্র ও সমাজের সিংহভাগ অভিযোগ ও সমস্যা এমনিতেই দূর হয়ে যাবে, ইনশাল্লাহ।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি লাভের তৌফিক দান করুন। আমিন।।