গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির:-
ইসলাম শান্তির ধর্ম, সব ধরনের অশান্তি, বিশৃঙ্খলা, মারামারি, হানাহানি, জুলুম নির্যাতন বন্ধ করে মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা প্রকাশের জন্য এবং নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষের জীবনের নিরাপত্তার জন্য ইসলামের আগমন ঘটেছে। জাহেলি যুগে তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুনাখুনি, হানাহানি এবং রক্তের বদলে রক্ত নিতে গিয়ে অসংখ্য নিরপরাধ মানুষের জীবনহানি ঘটত এবং বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধবিগ্রহ চলত। ইসলামের মহান প্রবর্তক বিশ্ব শান্তির মূর্তপ্রতীক হযরত মুহাম্মদ সা. এসে এ সবকিছু সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন। বিদায় হজ্জের ভাষণে তিনি অত্যন্ত কঠোরভাবে ঘোষণা করলেন : হে মানবমণ্ডলী! আজকের এই দিন, এই মাস, এই শহরটি যেমন সম্মানিত, তেমনি তোমাদের রক্ত, তোমাদের ইজ্জত, তোমাদের সম্পদ পরষ্পরের প্রতি কিয়ামত পর্যন্ত সম্মানিত। বর্তমান সময়ে, দেশে সাধারণ মানুষ আছেন অস্থিরতা ও অনিশ্চিত রাজনৈতিক ভবিষ্যতের দিকে। এসময় তাবলীগ জামাতের দুইগ্ৰুপের সহিংসতা দেশ ও জাতির এ ক্লান্তিকালে সত্যিই দুর্ভাগ্য জনক। কখন কি ঘটে এ ভয়ে সবাই আতঙ্কে।
এরিমধ্যে একাধিক মৃত্যু এবং দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। অন্যায়ভাবে একজন মানুষ হত্যা করাকে কোরআনে কারিমে ‘সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা’ করার নামান্তর আখ্যায়িত করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনুল কারিমে অন্যায়ভাবে হত্যা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপরাধ সম্পর্কে ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করল সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করল, আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করল সে যেন সব মানুষের প্রাণ রক্ষা করল। [সূরা মায়েদা:৩২] অন্যায়ভাবে হত্যার শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরস্থায়ী হবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন, তাকে লা’নত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। [সূরা নিসা:৯৩] ইসলাম ধর্মে হত্যার প্রতি প্ররোচনা দানকারী হিসেবে হিংসা-বিদ্বেষ- ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছে।
এ বিষয়ে হযরত মুহাম্মদ সা. বলেন, ‘তোমরা একে অপরের সঙ্গে বিদ্বেষ পোষণ করো না, হিংসা করো না এবং একে অপরের পেছনে লেগে থেকনা। আল্লাহর বান্দা সবাই ভাই ভাই হয়ে যাও। [সহিহ বোখারি] এমনকি হত্যার প্রাথমিক বিষয় তথা অস্ত্র দিয়েও কাউকে ভয় দেখাতে নিষেধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের দিকে অস্ত্র তাক না করে। কারণ সে জানে না, হয়ত শয়তান তার হাত থেকে তা বের করে দিতে পারে, ফলে সে জাহান্নামের গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হবে।’ [সহিহ বোখারি] মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর সৃষ্টজীবকে পুড়িয়ে মারার অধিকার কারো দেন নি।
আগুনে পুড়িয়ে মারার অধিকার একমাত্র আল্লাহ তায়ালারই। আগুনে পুড়িয়ে মারার ফলে একসাথে কয়েকটি অপরাধ সংগঠিত হয়, এর কোনো কোনোটি তো শিরকের পর্যায়ভুক্ত। কাউকে আগুনে পুড়িয়ে মারা বা মারার চেষ্টা জঘন্যতম অপরাধ। যারা এ ধরনের কাজ করবে, আল্লাহর বিধান লঙ্ঘনের কারণে তারা আল্লাহর রহমত থেকে অবশ্যই বঞ্চিত হবে এবং রাসূল সা. এর কথা না মানার কারণে তারা কিয়ামতের দিন রাসূল সা. এর শাফায়াত পাবে না,।
হাদীস শরীফে আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ সা. কোনো মানুষ, জীব-জন্তু বা কোনো ফসল-গাছ-পালাকে আগুনে পোড়াতে নিষেধ করেছেন। রাসূলে কারিম সা. বলেন, ‘আগুন দ্বারা কেবল আল্লাহই শাস্তি দেবেন, আল্লাহ ছাড়া আর কারো আগুন দ্বারা শাস্তি দেওয়ার অধিকার নাই।’ [বোখারি ও আবু দাউদ] তেমনি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা মহা পাপ। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে।
আল্লাহ তার প্রতি ক্রদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্যে ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন”। [সূরা আন নিসা: আয়াত নং ৯৩] কিন্তু আজ এ কি দেখছি! লক্ষ শহীদের রক্ত ও মা- বোনদের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া বাংলাদেশে। কেউ ক্ষমতায় যেতে উঠে লেগেছে, কেউ মাজার মসজিদ দরবার খানকায় হামলা আগুন লুটপাট করছে , কেউ মাঠ দখলের জন্য নিজ দলের অপর গ্রুপের লোকদের হত্যা করছে। আজ গোটা দেশটা যেন সন্ত্রাসী আর খুন খারাবিতে ভরে গেছে জ্যান্ত শ্মশানে। এভাবে আর কতদিন চলবে? যত দিন পর্যন্ত জনগনের নীতি আদর্শে ধর্মীও অনুভূতি না জাগবে, ততদিন পর্যন্ত জনগনের নিরাপত্তা সুখ শান্তি আসবে না। মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা অনুভুতি থাকতে হবে।
লোভ লালসা মাটির নিচে পুতে ফেলতে হবে। (কোরআন - সুন্নাহ)র আলোকে ধর্ম কে আকড়িয়ে ধরতে হবে। বিশেষ করে শান্তি প্রিয় সম্প্রদায় (সুন্নি-সূফী) ধারাকে অনুসরণ করা দেশের প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য। তাহলে আসবে সমাজে শান্তি, সুখের উল্লাস, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদীসের আলোকে খুব সহজেই বুঝা যায় যে, কাউকে আগুনে পুড়িয়ে বা অন্যায়ভাবে হত্যা করা বা হত্যার চেষ্টা জঘন্যতম অপরাধ। যারা এ অপরাধ করবে, তারা আল্লাহর রহমত থেকে অবশ্যই বঞ্চিত হবে।
রাসূলুল্লাহ সা. কাফের- মুশরেকদের বিরুদ্ধেও কোনো যুদ্ধে কাউকে আগুনে পোড়ানোর অনুমতি দেননি। কারণ জাহান্নামে আল্লাহ তায়ালা অপরাধীদের জন্য আগুনের শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। তাই কাউকে আগুন দিয়ে শাস্তি দেওয়া ইসলাম ধর্মে হারাম। তবে মানুষের অধিকার আছে, যদি ক্ষতিকারক কোন বিষাক্ত জীব পিটিয়ে না মারা যায় তখন আগুনে পুড়িয়ে মারা যায়। কিন্তু আজ খুবই দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে লক্ষ করছি যে, আমাদের মুসলিম ভাই- বোনদের অহরহ আগুনে পোড়ানো হচ্ছে এবং অন্যায়ভাবে ধরে নিয়ে আহত ও নিহত করা হচ্ছে। জীবন্ত মানুষকে পিটিয়ে মারা হচ্ছে, বাড়ি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ইসলামের বিধানের তোয়াক্কা না করে, মানবতাকে পায়ে পিষে, পশুত্বের কোন স্তরে পৌঁছলে এমন কাজ করা সম্ভব তা বোধগম্য নয়।
এই সব জগণ্যতম কর্ম-কাণ্ড দেখলে শয়তানও ঘৃণা ও লজ্জা পায়। আমরা আজ কোথায় বাস করছি? আমরা কি সভ্য জগতের বাসিন্দা, আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব? নাকি অন্য কিছু, কিছুই বুঝতেছিনা! সবসময় আল্লাহর বাণী মনে রাখতে হবে- ‘যে সৎকাজ করছে সে নিজের কল্যাণার্থেই তা করছে, আর যে অসৎকাজ করছে তা তার উপরই বর্তাবে। [জাসিয়া : ১৫] অন্যত্র ইরশাদ করেছেন- ‘প্রত্যেক ব্যক্তি তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী।’ [মুদ্দাস্সির : ৩৮] ইসলামঝ কোনোভাবেই অন্যের জানমালের ক্ষতি সাধন সমর্থন করে না।
যারা মানুষের জানমালের ক্ষতি করে ইসলাম তাদের প্রকৃত মুমিন বলে স্বীকৃতি দেয় না। রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন- প্রকৃত মুমিন সে ব্যক্তি যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ [মুসলিম] তাই আসুন ,সাধারণ ও নিরীহ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য আপামর সকলের কাছে উদ্ধাদ্ব আহ্বান জানাই, মহান আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করি , মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ গ্রহণ করি । দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তির ঠিকানা নিশ্চিত করি। আমিন।।