Crime News tv 24
ঢাকাশনিবার , ৪ জানুয়ারি ২০২৫
  1. অন্যন্য
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. খেলা
  5. জাতীয়
  6. দেশজুড়ে
  7. ধর্ম
  8. ফিচার
  9. বাংলাদেশ
  10. বিনোদন
  11. মতামত
  12. রাজনীতি
  13. রান্না
  14. রাশিফল
  15. লাইফস্টাইল
আজকের সর্বশেষ সবখবর

শীতের জনপ্রিয় খেলা ব্যাটমিন্টন।

admin
জানুয়ারি ৪, ২০২৫ ৪:৪২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

তানজিলা আক্তার নিজস্ব প্রতিবেদক:-

এই শীতে জনপ্রিয় একটি খেলা ব্যাডমিন্টন। শীতের রাতে এই খেলা কেবল শরীরচর্চা নয়, বরং ঠান্ডার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক চমৎকার উপায়। পাড়া-মহল্লাসহ রাস্তার অলিগলি যেখানেই একটু জায়গা আছে সেখানে সবাই মেতে উঠেছে এই খেলায়। ছোট-বড় তরুণ-তরুণী, এমনকি বয়ষ্করাও এ খেলায় অংশ নেয়। এ যেন আনন্দ ভাগাভাগি করার এবং সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করার এক অনন্য সুযোগ।
যারা খেলায় অংশ নেয় না তারাও দর্শক হয়ে খেলা দেখার আনন্দ উপভোগ করে। এই শীতে এমন দৃশ্য চোখে পড়ছে অহরহ। বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও আগ্রহী এ খেলার জন্য। ব্যাটমিন্টনের সারঞ্জাম কিনতে মা বাবার কাছে বায়না করছে তারা। অনেক সময় তাদের চাহিদা অনুযায়ী না পেলে ঘটাচ্ছে প্রাণহানির মতো নানা অপ্রতিকর ঘটনা। এদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে মানুষের জীবনে নেমে এসেছে দূর্বিষহ। সংসারের খরচ আর পড়াশনার খরচ মিটিয়ে সন্তানের চাহিদা পূরনে হিমশিম খায় অসহায় বাবা মা। এমনই এক অসহায় হতদরিদ্র রিকশাওয়ালা বাবা জসিম। যিনি রাস্তার ধারে রিকশা রেখে ব্যাটমিন্টনের দাম কত জানতে চাইছিলেন একদল ব্যাটমিন্টন খেলোয়াড় কিশোরদের কাছে। আজকে তিনি ছেলে মেয়ের বায়না করা ব্যাটমিন্টন নিয়ে যাবেন বলে আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করে সাংবাদিক তানজিলার সাথে। তিনি আরো বলেন এক সপ্তাহ ধরে ছেলে মেয়ে এই ব্যাটমিন্টনের বায়না করছে। টাকার জন্য কিনে দিতে পারি না। শীতের দিনে রিকশা চালানো অনেক কষ্টকর। যা ইনকাম করি তা সংসার খরচ আর ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ দিতে হিমশিম খেতে হয়। তিনি নিজের শৈশবের স্মৃতিচারন করে বলেন,আমার বাবা কৃষক ছিলেন ৭ ভাই বোন আমরা। আমাদের সবার বায়না পূরণ করা বাবার জন্য কষ্টকর হতো। আমরাও বাবার কাছে বায়না করতাম না। বুঝার চেষ্টা করতাম বাবার পরিস্থিতি সম্পর্কে। কিন্তু এখনকার ছেলেমেয়েরা বুঝে না। বরং তাদের চাহিদা অনুযায়ী না পেলে রাগ দেখায়,না খেয়ে থাকে,আবার পড়তেও চায় না। আমার মেয়ে বুঝেও ছেলে বুঝে না। ব্যাটমিন্টনের জন্য পড়তে বসে না,স্কুলেও যেতে চায় না। তাই আজকে বাজার না নিয়ে ছেলের জন্য ব্যাটমিন্টন নিয়ে যাব। এ কথাটি বলে রিকশাওয়ালা জসিম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।তার চোখেমুখে যেন চিন্তার একটা ভাজ ফুটে ওঠছে। প্রাচীনকাল থেকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা ঐতিহ্যবাহী ব্যাটমিন্টন খেলা শীতে শরীরে উষ্ণতা আর মনে প্রশান্তি জোগাতে অতুলনীয় ভুমিকা রাখে। ব্যাটমিন্টনের র‍্যাকেট একবার হাতে তুলে নিলে শীতের জড়তা আর অনুভূত হয় না। এজন্য শীত এলেই সবাই মিলে চাঁদা তুলে নেট কেনা, ফাঁকা জায়গা নির্বাচন করে নেট টাঙিয়ে খেলার উপযোগী কোর্ট তৈরি করাসহ খেলার মাঠ আলোকিত করার ধুম পড়ে। এরপর সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে র‍্যাকেট, শাটলকক হাতে নিয়ে একের পর এক দল মেতে ওঠে চিরাচরিত এই ব্যাডমিন্টন খেলায়। দিনের ক্লান্তি ভুলে রাতের ব্যাডমিন্টন কোর্টে একত্র হওয়া মানুষের কাছে এটা যেন এক নেশা। লাইটের আলোর নিচে শাটলকক উড়ে বেড়ায় আর র‍্যাকেটের বাড়ি খাওয়া দৃশ্য এবং খেলার মাঠে থাকা উৎসুক জনতার উচ্ছ্বাসে যেন নতুন প্রাণ পায় পুরো পরিবেশ।শীতের রাতে ব্যাডমিন্টন খেলার আয়োজন খুব সাদামাটা হলেও এর আনন্দের মাত্রা অসীম। অত্যাধিক পরিশ্রমের একটি খেলা ব্যাডমিন্টন।এ খেলাকে সবচেয়ে ব্যস্ততম খেলাও বলা যায়।কেননা খেলোয়াড়কে কোর্টের মধ্যে সারাক্ষণ সচল থাকতে হয়। এই খেলা মানুষের মনোসংযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যও ভীষণ প্রয়োজনীয় একটি খেলা। এছাড়াও রয়েছে আরো স্বাস্থ্য উপকারিতা। এক ঘন্টা ব্যাডমিন্টন খেললে ৪৮০ ক্যালরি বার্ন করা যায়। যেখানে সমপরিমাণ সময় দৌড়ালে বার্ন হয় এর মাত্র অর্ধেক। অন্য যে কোন খেলার তুলনায় ব্যাডমিন্টন খেলায় ক্যালরি বার্ন হয় বেশী। যদি নিয়মিত ব্যাডমিন্টন খেলার অভ্যাস গড়ে তুলা যায় তাহলে প্রতি মাসে ৪ কেজি ওজন কমানো সম্ভব। এই খেলাটি ভীষণ পরিশ্রমের, শরীরের প্রায় সব মাসল ব্যবহৃত হয়। তাই দ্রুত ওজন কমাতে এটি বেশ কার্যকরী। নিয়মিত ব্যাডমিন্টন খেলা মনকে সতেজ এবং ফুরফুরে করে তোলে। মানসিক ক্লান্তি দূর করে কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। এই খেলা একই সাথে বুদ্ধির চর্চা এবং বিকাশ ও করে। যাদের অতিমাত্রায় কোলেস্টরল আছে তাদের হৃদপিণ্ডের দেয়াল চর্বির জন্য বাধাপ্রাপ্ত হয়। ব্যাডমিন্টন হৃদপিণ্ডের মাসলকে সচল করে। কলেস্টরল কমায়। ফলে হৃদপিণ্ডজনিত স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি কমে। ব্যাডমিন্টন খেলা হাড়ের কোষগুলোর গ্রোথ বাড়ায়। সামগ্রিকভাবে শরীরের সামর্থ্য বাড়িয়েকরে আরো শক্তিশালী।ব্যাডমিন্টনে ১ ঘন্টায় যে পরিমাণ পরিশ্রম করতে বাধ্য করে তা রক্তের সুগার কমায় যা ডায়বেটিসের জন্য মূলত দায়ী। এটি লিভার থেকে সুগার সরবরাহ কমিয়ে দেয়, নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ঝুকিমুক্ত। ঔষধপত্র ছাড়া উচ্চরক্তচাপ কমানো খুবই কঠিন। কারণ শরীর ঔষধ গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।ব্যাডমিন্টন এক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে। এই খেলা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং শরীরে রাসায়নিক পদার্থের সরবরাহ বাড়ায় যা ঔষধের অভ্যস্থতাকে মোকাবেলা করে। খেলাধূলার মত দারুণ শরীরচর্চা আর হয় না। শীতের রাতের এই ব্যাটমিন্টন খেলা শরীরকে যেমন উষ্ণ রাখে তেমনি মনেও প্রশান্তি আনে। স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় এ খেলার সরঞ্জামের অতিরিক্ত দামও কখনো কখনো খেলোয়াড়দের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও শহর অঞ্চলে খেলার জায়গার সংকট আরেকটি বড় প্রতিবন্ধকতা। এছাড়াও আলোর ব্যবস্থা করতে গিয়ে অনেক সময় অসাদুপায় অবলম্বন করে অনেকেই, যেটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এর পরেও শীতকালে ব্যাডমিন্টন খেলার জনপ্রিয়তা থেমে থাকে না। বড় বড় শহরের গলি গলি রাস্তায় নেট টাঙ্গিয়েও খেলতে দেখা যায় র‍্যাকেট প্রিয় মানুষদের।এই ব্যাডমিন্টনের ইতিহাসও বেশ পুরোনো এবং সমৃদ্ধ। এ খেলার উৎপত্তি ১৮৭৩ সালে ইংল্যান্ডের গ্লুচেস্টারশায়ারের একটি ছোট গ্রাম “ব্যাডমিন্টন” থেকে। এই গ্রামের নাম অনুসারেই খেলার নাম রাখা হয় “ব্যাডমিন্টন”। ধারণা করা হয় ভারতে ব্রিটিশ সেনারা একটি প্রাচীন খেলা “পুনাই” থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এটি ইংল্যান্ডে নিয়ে আসেন। প্রথমদিকে এটি এক ধরনের সামাজিক খেলা হিসেবে জনপ্রিয় ছিল।
পরবর্তীতে ১৮৭৭ সালে ব্যাডমিন্টনের প্রথম নিয়ম তৈরি করা হয় এবং একই বছর ইংল্যান্ডের বাথ শহরে প্রথম ব্যাডমিন্টন ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৩৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন, যা বর্তমানে ব্যাডমিন্টন ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন (BWF) নামে পরিচিত। আধুনিক ব্যাডমিন্টনের একটি বড় মাইলফলক হলো ১৯৯২ সালে বার্সেলোনা অলিম্পিকে খেলার অন্তর্ভুক্তি। পাঁচটি ইভেন্ট নিয়ে শুরু হওয়া এই খেলা আজ বিশ্বের অন্যতম।