আজাদ হোসেন, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:-
০৩-০১-২০২৪ চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে জমি-জমা নিয়ে পূর্ব বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের ঘরবাড়িতে ব্যাপক হামলা ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে । এসময় হামলা কারিরা কূপিয়ে গৃহকর্তা শহিদুল ইসলাম (৮০) ও তার স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন (৬৫) কে মারাত্মক জখম করে। এ ঘটনায় জীবননগর থানায় ২০ জনের না উল্লেখ এবং আরও ১৫/২০কে অজ্ঞাত দেখিয়ে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন হোসেন বিশ্বাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে জানাযায়, চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত নিশ্চিন্তপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের বাড়িতে বুধবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে প্রতিবেশী মনির, আকরাম ও কোরবানের নেতৃত্বে ৩৫ থেকে ৪০ জন সংঘবদ্ধ ভাবে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত অবস্থায় পরিকল্পিতভাবে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এসময় হামলা কারিদের তান্ডবে বাড়িতে রাখা দুটি স্যালো মেশিন দুইটি পাখি ভ্যান সহ ঘরের সমস্ত আসবাবপত্র এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র ভাঙচুর লুটপাটের শিকার হয়। ঘরের আলমারিতে রক্ষিত সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা, বস্তা ভর্তি চাল, এমনকি মূল্যবান বাসনপত্র তারা লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় হামলাকারীদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে তারা গৃহকর্তা বৃদ্ধ শহিদুল ইসলাম (৮০)ও তার অসুস্থ স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন (৬৫)কে বেধড়ক মেরে এবং কুপিয়ে যখম করে। তাদের নির্মম হামলা থেকে বাড়ির পশু ছাগলও রক্ষা পায়নি। অভিযোগ পেয়ে জীবননগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন ও ঐ এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে শক্ত ভূমিকা নেয়।
ঘটনার সুত্রপাত অনুসন্ধানে জানাযায়, একই গ্ৰামের প্রতিপক্ষ মনির গঙরা কয়েক মাস আগে বৃদ্ধ শহিদুল ইসলামের জমিতে কলাগাছ লাগিয়ে অবৈধভাবে দখল করে। এতে করে শহিদুল ইসলাম তার জমিতে অবৈধভাবে লাগানো কলা গাছ কেটে ফেলে। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষ মনির গঙ শহিদুল ইসলাম এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে চুয়াডাঙ্গা আমলি আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় শহিদুল ইসলামরা সকলেই বেকসুর খালাস পান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শহিদুল ইসলামকে শায়েস্তা করার চেষ্টা অব্যাহত রাখে মনির গঙরা।
একপর্যায়ে গত বুধবার ভোরে শহিদুল ইসলামের বাড়ির সকলে যখন ঘুমিয়ে ছিল সেসময় তারা ঘরের লোহার গ্ৰীলের দরজা ভাঙতে ব্যর্থ হয়ে ভেন্টিলেটর ভেঙে উপর দিয়ে একে একে সকলে প্রবেশ করে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ লুটপাট এবং মারধরের ঘটনা ঘটায়। এবিষয়ে শহিদুল ইসলামের ছেলে আমিরুল ইসলাম জানান, তাদের প্রতিবেশী মনির, আকরাম ও কোরবানের নেতৃত্বে ৫০ জনের মত একদল দুর্বৃত্ত গত বুধবার ভোরে তাদের বাড়ির সকলে ঘুমিয়ে থাকার সুযোগে ঘরের ভেন্টিলেটর ভেঙে ভিতরে ঢুকে ঘরের সমস্ত আসবাবপত্র বাসনপত্র মূল্যবান জিনিসপত্র ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ সময় তারা তাদের আলমারির ভিতর রক্ষিত পাঁচ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা,দামী জিনিসপত্র এমনকি চালের বস্তা পর্যন্ত তারা লুট করে নিয়ে যায়। এছাড়া তারা বেধড়ক পিটিয়ে একটি ছাগলও মেরে ফেলে। তিনি আরো জানান এই ঘটনায় আমরা সাথে সাথে জীবননগর থানা পুলিশকে জানাই তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নেয়। এরপর আমরা ওই দিনই জীবননগর থানায় অভিযুক্তদের নাম উল্লেখপূর্বক একটি মামলা দায়ের করি। পুলিশ আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছে অবিলম্বে ওই সকল দুর্বৃত্তদেরকে আইনের আওতায় এনে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মনির হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনার সময় আমি ফজরের নামাজ পড়ে পার্শ্ববর্তী চায়ের দোকানে বসে চা পান করছিলাম। এসময় দেখি শহিদুল ইসলামের বাড়ির ভেতরে ৪০/৫০ জনের একটি দল প্রবেশ করে চিৎকার ও চেঁচামেচি করছে। আমি তাদেরকে থামাতে চাইলেও ব্যর্থ হই। তিনি আরো বলেন তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
আন্দুল বাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা হাবিবুর রহমান লিটনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামে এরকম একটি ঘটনা ঘটেছে আমি জানতে পেরেছি। তাদের মধ্যে যে বিরোধই থাকুক না কেন একজনের বাড়িতে প্রকাশ্যে দিবালোকে এভাবে হামলা ধ্বংস লুটপাট করা ঠিক হয়নি। তাদের যদি কোন কিছু বলার থাকতো বা অভিযোগ থাকতো তাহলে তারা আইনের আশ্রয় নিতে পারতেন, এভাবে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট কোনভাবেই কাম্য নয়।
আজাদ হোসেন/চুয়াডাঙ্গা
০১৭১১-২১৭৩৯০