ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি’র চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা ও মহাসচিব মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা ২১ জানুয়ারি এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন মওলানা ভাসানীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল এক ঐতিহাসিক ঘটনা। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় দীর্ঘদিন ভারতে থাকার পর ১৯৭২ সালের ২২ শে জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের গণমানুষের একটি ঐতিহাসিক প্রাপ্তি। তিনি সব সময় আধিপত্যের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং লড়াই করেছেন। ক্ষমতার জন্য কখনও রাজনীতি করেননি। বরং মানুষের জন্য তার রাজনীতি ছিল। তিনি নেতাদের নেতা ছিলেন। সাদামাটা জীবন-যাপন পছন্দ করতেন এবং পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে সাদামাটাভাবেই চলে যেতেন। ইতিহাসের এই কালজয়ী ব্যক্তিত্ব আমরা আর দ্বিতীয়বার বাংলাদেশের মাটিতে খুঁজে পাবো না। তিনি শুধু রাজনৈতিক নেতাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন আধ্যাত্মিক নেতা। প্রতি বছর তার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন ছাড়াও দেশে-বিদেশে হাজার হাজার মুরিদ উপস্থিত হন। সময়ের বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন মওলানা ভাসানীর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বাংলাদেশের সবাই রাজনীতিতে রাতারাতি উচ্চবিলাশী হয়ে শটকাটে ধনী হতে চায়, কিন্তু মওলানা ভাসানীর রাজনীতির আদর্শের কাছে ফিরে গেলে তার রাজনীতি ছিল জনগণ ও দেশপ্রেমিক। এর বাইরে তিনি কিছুই চিন্তা করেনি। প্রতিদিন সীমান্তে মানুষ হত্যা হচ্ছে, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও আজও প্রতিবেশী ভারত আমাদের ন্যায্য হিস্যা দেয়নি। তারা আমাদের বন্ধু হিসেবে বরণও করেনি কখনও। আর সেখানেই মওলানা ভাসানী ছিলেন আমাদের চেতনার বাতিঘর। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে আমরা তার ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরা নৈতিক দায়িত্ব। সেই সাথে রাষ্ট্রের উচিত তার জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী জাতীয়ভাবে পালন করা। তিনি মহান ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে যে অবদান রেখেন তা প্রতিটি পাঠ্যপুস্তকে তুলে ধরা।
১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার ধানগড়া গ্রামে জন্মেছিলেন ভাসানী। শৈশবে পিতামাতা হারানো আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার কড়াকড়ি পছন্দ করতে পারেননি। ১৯০৭ সাল থেকে ২ বছর তিনি দেওবন্দ মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। কিন্তু সেখানে বিদ্যাশিক্ষার চেয়ে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামী রাজনৈতিক চেতনায় বেশি দীক্ষা গ্রহণ করেন তিনি।
১৯০৯ সালে টাঙ্গাইলের কাগমারি স্কুলের শিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু হয়। চিত্তরঞ্জন দাশের সাহচর্যে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে তিনি প্রবেশ করেন ১৯১৭ সালে তার জাতীয়তাবাদী দলে যোগদানের মাধ্যমে। ১৯১৯ সালে কংগ্রেসের প্রাথমিক সদস্য হন তিনি। আসামের ধুবড়ী জেলার ভাসানচরে তিনি এক বিশাল কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেছিলেন। এরপর লোকমুখে তিনি ‘ভাসানচরের মওলানা’ বা ‘ভাসানীর মওলানা’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। পরবর্তীকালে ‘ভাসানী’ শব্দটি তাঁর নামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে যুক্ত হয়ে যায়।
১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর তিনি মারা যান ঢাকায়। তাকে কবর দেওয়া হয় টাঙ্গাইলের সন্তোষে।