করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চার মাসের বিধিনিষেধ কিংবা লকডাউনের অবসান হচ্ছে আজ বুধবার। আজ থেকে আবারও সচল হচ্ছে দেশ। সড়কে নামার অপেক্ষায় আছে বাসসহ গণপরিবহন। খুলবে বন্ধ সব অফিস আদালত, শপিং মল ও দোকানপাট।
গোটা দেশ সচল হলেও বন্ধ থাকছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের করোনার টিকার আওতায় এনে তবে খোলার কথা ভাবছে সরকার। বিনোদন আর পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখার পাশাপাশি জনসমাবেশ, সামাজিক ও ধর্মীয় আয়োজনের ওপর থেকে যাচ্ছে নিষেধাজ্ঞা।
গত ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয় এই বিধিনিষেধ। তারপর ধাপে ধাপে বাড়ানো হয় এটি। ১৪ জুলাই পর্যন্ত লকডাউন চলার পর কোরবানির ঈদে পশুর হাটে বেচাবিক্রি ও ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আট দিনের জন্য শিথিল করা হয় লকডাউন।
কোরবানির ছুটি শেষে ২৩ জুলাই থেকে আবার শুরু হয় কঠোর বিধিনিষেধ, যা পরিচিতি পায় ‘শাটডাউন’ নামে।
খুলছে অফিস, দোকানপাট
দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে অফিস-আদালত, যানবাহন, শপিংমল, দোকানপাট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এ কথা বলা হয়েছে।
দোকানপাট খোলা রাখার সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সচল থাকবে এগুলো। তবে খাবারের দোকান একটু বেশি সময় পাচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সচল থাকবে রেস্টুরেন্ট।
রাজধানীর নিউমার্কেট, বসুন্ধরা শপিংমল, মিরপুর বেনারশি পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা দোকানগুলো ধোয়ামোছার কাজ চলছে। কেউ কেউ আবার দোকান খুলে ভেতরে পণ্য সাজানোর কাজ করছেন।
অর্ধেক গণপরিবহন নিয়ে ধোঁয়াশা
আসনসংখ্যার সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে বাস চলাচলে অনুমতি দিয়েছে সরকার। ফলে বাড়তি ভাড়া আদায়ের কোনো সুযোগ থাকছে না পরিবহন মালিকদের।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সড়ক, রেল ও নৌপথে আসনসংখ্যার সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন, যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তবে সড়কপথে গণপরিবহন তথা বাস চালানোর ক্ষেত্রে প্রতিদিন মোট পরিবহনের অর্ধেক চালু করা যাবে।
এর আগে বিধিনিষেধের মধ্যে বাস চালু করা হলেও বলা হতো ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের কথা। সে ক্ষেত্রে বাড়তি ৬০ শতাংশ ভাড়া গুনতে হতো যাত্রীদের। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না। রাস্তায় অর্ধেক বাস নামানো হলেও যাত্রী তুলতে পারবে আসন সংখ্যার সমপরিমাণ।
সরকারের এমন আদেশে উঠেছে প্রশ্ন, চলছে বিতর্ক। অর্ধেক যানবাহন চালুর প্রসঙ্গে পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েতউল্লাহ বলেন, ‘এটা বাস্তবায়ন করা খুব কঠিন হবে। আবার সড়কে গাড়ি কমিয়ে দিলে তাতে চলাচলের ভোগান্তি বাড়ার পাশাপাশি গাড়িতে ভিড়ও বাড়বে। এতে স্বাস্থ্যবিধি পালন হুমকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হলে সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে বলে উদ্বেগ জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদরাও।
রাজধানীর গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, বুধবার থেকে বাস ছাড়তে ধোয়ামোছার কাজ করছেন বাসের সহকারীরা। অনেকে আবার ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে চেক করছেন।
খুলছে না পর্যটনকেন্দ্র, বন্ধ জনসমাগম
জনসমাগত ঠেকাতে বিনোদন ও পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে বহাল আছে। এসব স্থানে মানুষের মাত্রাতিরিক্ত ভিড়ের আশঙ্কা করছে সরকার।
একই সঙ্গে জনসমাগত ঠেকাতে সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আয়োজনও বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ধাপে ধাপে সব কিছু খুলে দেয়া হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেই
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তবে শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় এনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ইঙ্গিত মিলেছে তার কথায়।
সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সেটা শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানাবে। ওনারা এটা নিয়ে আলোচনা করছেন, কীভাবে এটা করা যায়। ভ্যাকসিনেশন জোরদার করছে তারা, যাতে ছাত্রদেরও ভ্যাকসিন দিয়ে দেয়া যায়। তারপরে দেখা যাক। সেটা ওনারা আপনাদেরকে ব্রিফ করবেন।’