শুরুর গল্পটা ২০১৭ সালের। মাশরুমের চপ খেয়ে ভালোলাগায় নিজের দোকানে এই চপ তৈরি করে তা বিক্রির প্রবল ইচ্ছা জাগে মনে। যেই ভাবনা সেই কাজ। এলাকার একজন নারী মাশরুম চাষির নিকট থেকে কাঁচা মাশরুম কিনে তা দিয়ে চপ তৈরি করে বিক্রি শুরু করেন দোকানে । চপ প্রেমিদের ভালো সাড়াও মেলে তখন। এবার মাথায় চিন্তা এলো মাশরুম কিনে নয়; নিজে উৎপাদন করে সেই মাশরুমের চপ বিক্রি করব । সে চিন্তা থেকেই ছুটে গেলেন প্রথমে এলাকার ওই নারী মাশরুম চাষির নিকট। কিন্তু মাশরুম চাষের ব্যাপারে তার কাছ থেকে আশানরুপ সহযোগিতা না পাওয়ায় যোগাযোগ করলেন যশোর মাশরুম সেন্টারে। সেখান থেকেই মূলত মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে মাশরুমের বীজ সংগ্রহ করে নিজ বাড়িতে শুরু করলেন মাশরুম চাষ। দুইটি ঘরে চারটি কাঠের তাকে ওয়েস্টার জাতের মাশরুমের স্পনগুলো থাকে থাকে সাজিয়ে স্বপ্নের যাত্রা শুরু করলেন। মাসখানের মধ্যেই ফলন আসতে শুরু করে। এদিকে চাপরাইল বাজারে অবস্থিত তার দোকানের নামকরণ করলেন “মাশরুম চপ হাউজ”। ৩০ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে “মায়ের দোয়া মাশরুম সেন্টার” নামে ১৫০০ স্পন দিয়ে প্রথম শুরু। নিজের চাষকৃত ২০ থেকে ২৫ কেজি কাঁচা মাশরুম প্রতিমাসে দোকানে এনে তা দিয়ে চপ বানান তিনি। মাশরুমের তিন ধরনের চপ প্রতিটি যথাক্রমে ১০,২০ ও ৫০ টাকা মূল্যে বিক্রি করেন ক্রেতাদের নিকট। এভাবে প্রতিদিন দোকানে নিজ হাতে আলু ও মাংসের চপের পাশাপাশি মাশরুমের তৈরির চপ বিক্রি করে তিনি প্রায় ৫০ হাজার টাকা মাসে আয় করেন। কালীগঞ্জ উপজেলার অনুপমপুর গ্রামের শামসুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল ইসলাম মাশরুম চপ হাউজ নামের দোকান দিয়ে বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত একজন মাশরুম উদ্যোক্তা হিসেবে এলাকায় বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। তার সাফল্য দেখে আশপাশের অনেকেই মাশরুম চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন, নিচ্ছেন তার নিকট থেকে পরামর্শ। মধ্যবিত্ত পরিবারের বেড়ে ওঠা এই তরুণ লেখাপড়ার গোন্ডি বেশি দূর পেরতে পারেননি। বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ করে পুষ্টিকর সুস্বাদু ও ঔষধি গুণ সম্পন্ন এই খাবারটি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। স্বপ্নবাজ এই তরুণ মাশরুম উদ্যোক্তা আশরাফুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, মাশরুম চাষ বেকার সমস্যার সমাধান ও বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। উপজেলা কৃষি অফিস মাশরুম চাষের উপর প্রশিক্ষণ, বীজ ও উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে। আমিও তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেই। প্রথম স্পন প্যাকেট থেকে ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ফলন আসে। ২ কেজির একটি স্পন প্যাকেট থেকে প্রায় ২ কেজি মাশরুম পাওয়া যায়। প্রতি কেজি কাঁচা মাশরুম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ও শুকনো মাশরুমে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হয়ে থাকে। বাজারে মাশরুমের বেশ চাহিদা রয়েছে। কিন্তু অনেকেই মাশরুম বিক্রির জায়গা বা স্থান সঠিকভাবে নির্বাচন করতে না পারায় উৎপাদিত মাশরুম বিক্রি হয় না বলে অভিযোগ করেন। অবশ্য আমাদের কালীগঞ্জ উপজেলায় মাশরুম চাষিদের উৎপাদিত মাশরুম সুপার শপ এ বিক্রির একটি প্রক্রিয়া কৃষি অফিসের মাধ্যমে চলমান রয়েছে। সেটি কার্যকর করা সম্ভব হলে মাশরুম চাষিরা তাদের উৎপাদিত মাশরুম সহজেই বিক্রি করতে পারবেন।কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলায় মাত্র ১৮ জন বেকার যুবক ও নারী উদ্যোক্তা মাশরুম চাষ করছেন। তাদের মধ্যে ৬ জন নারী রয়েছেন। যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের অধীনে কৃষি অফিস এইসব মাশরুম চাষিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন। প্রশিক্ষণ নেওয়া প্রত্যেকে বেকার যুবক এবং নারীকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কাঠের তৈরি তাক,পানির পাত্র এবং ওয়েস্টার জাতের ১০০ টি স্পনও প্রদান করা হয়। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলম রনি বলেন, মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন খাবারের পাশাপাশি মাশরুম চাষ অনেক লাভজনক।সেটি প্রমাণ করেছেন সফল মাশরুম চাষি আশরাফুল ইসলাম। শুধু তাই নয় ; মাশরুম একটি সম্ভবনাময় ফসল। এদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু মাশরুম চাষের উপযোগী। মাশরুম চাষের জন্য কোনো উর্বর জমির প্রয়োজন হয় না। বসতঘরের পাশে অব্যবহৃত জায়গা ও ঘরের বারান্দা ব্যবহার করে অধিক পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করা সম্ভব।আমরা উপজেলার মাশরুম চাষিদের উৎপাদিত মাশরুম যশোরের সুপার সবগুলোতে বিক্রির সুযোগ সৃষ্টিতে কাজ করছি।ঝিনাইদহ জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা ইসরাত জাহান মুন বলেন, মাশরুম চাষীদেরকে আমরা প্রশিক্ষণ প্রদান করছি। চাষীদের উৎপাদিত মাশরুম বিক্রির ব্যাপারে কতটুকু কিভাবে সহায়তা প্রদান করছেন এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।