সুব্রত ঘোষ, গাইবান্ধা:
বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দীর্ঘ ৫৪৩ দিন বন্ধ থাকার পর আজ খুললো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে উৎসবের আমেজ। ইউনিফর্ম পরে, কাঁধে বই-খাতার ব্যাগ ঝুলিয়ে সারি সারি শিক্ষার্থীরা আবারও ফিরেছে তাদের প্রিয় ক্যাম্পাসে। শিক্ষার্থীদের কলরবে মুখরিত হয়ে উঠেছে প্রিয় শিক্ষাপ্রাঙ্গণ। দীর্ঘদিন পর স্কুল-কলেজ-মাদরাসায় আবারও যেতে পেরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বইছে এই উচ্ছ্বাস। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সর্বস্তরের মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও শেয়ার করে এই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে।
এদিকে এই উচ্ছ্বোসের পাশাপাশি অনেকের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, লেখাপড়ার দীর্ঘ বিরতি, পুনরায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনযোগী করে তোলাসহ নানা শঙ্কা বিরাজ করছে।
আজ সকালে গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ ঘুরে দেখা যায় দীর্ঘদিন পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় ছাএ, ছাত্রীদের কলরবে মুখরিত হয়ে গেছে প্রতিটি শিক্ষালয় । আবেগে আপ্লুত শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ নাসরিন সুলতানা রেখা বলেন , ‘দেড় বছর পর রাস্তায় স্কুল ড্রেস ও স্কুল ব্যাগ হাতে ছাত্র-ছাত্রীদের পদচারণা দেখতে খুব ভালো লাগছে। ভার্চুয়াল স্কুল থেকে একচুয়ালি স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের পদচারণা এই মুহূর্তে কতটা সফল হবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। বিশেষ করে কোরোনার অর্থনৈতিক আঘাতের ফলে ঝরে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাঙ্গনে ফিরিয়ে আনা কঠিন চ্যালেঞ্জের হবে। কোরোনার কারণে অভিভাবকদের স্থানান্তর, পেশা পরিবর্তন বা চাকুরীচ্যুতির কারণে এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক সমস্যার শিকার হয়েছে অসংখ্য ছাত্র ছাত্রী। তাদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বা পূর্বের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত কঠিন হবে। বিশেষ করে ছাত্রীদের। করোনার কারণে অনেক ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে । তাদের বেশির ভাগকেই আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনা যাবে না হয়তো। সংসারের আয় হ্রাস পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীকে ইতোমধ্যেই কোনো না কোনোভাবে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। তাদের শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করা চ্যালেঞ্জের হবে। নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের আর্থিক সঙ্গতি কমে যাওয়ায় অনেক পরিবারের পক্ষে শিক্ষার্থীকে স্কুলে পাঠানো কঠিন হয়ে পড়বে।এই অবস্থায় শিক্ষা ক্ষেত্রে করোনার আঘাত এবং শিক্ষার্থীদের ওপর এর প্রভাব নিয়ে একটি সর্বাত্ত্বক জরিপ করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। এবং নানাভাবে ঝরে পড়া স্কুলশিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ ও প্রণোদনা প্রদান করা জরুরী।
ফুলছড়ি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ঘুমের দিন শেষ। আবার শুরু হলো ডিউটি।’
‘দীর্ঘ দেড় বছর পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে আজ। ছাত্রছাত্রীদের মাঝে উৎসবের আমেজ। সবাইকে জানাই একটি আলোকিত সুন্দর দিনের শুভেচ্ছা।’
পুরোদমে পাঠদান শুরু করার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষক বিন্ধুরা বলেন ‘খুলে দেওয়া হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার বিকল্প যেহেতু নাই, প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিকল্পও নাই। পড়াশোনা থেকে এক দিন পিছিয়ে থাকা মানে জাতির উন্নয়ন অগ্রগতিতে ১০০ দিন পিছিয়ে থাকা। পুরোদমে শুরু হোক পাঠদান।
তিনি শুভ কামনা জানিয়ে বলেন , ‘শিক্ষক / শিক্ষার্থী সকলের জীবন নিরাপদ হোক এই কামনা রইলো। শুভ হোক নতুন করে শিক্ষা জীবনের সুত্রপাত। সকলের জন্য আন্তরিক শুভ কামনা।’
‘যেহেতু করোনার প্রকোপ পুরোপুরি কেমে নাই। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। না হলে আবার বন্ধ হওয়া আশঙ্কা তো রয়েছেই। গাইবান্ধা নরশতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, আজ থেকে কোমলমতি শিশুদের নতুন দিনের স্বপ্ন দেখা শুরু হলো। শিশুদের স্কুলে দেখে তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, আজ খুব আনন্দ লাগছে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে শিশুদের শিক্ষা দান করাই এখন প্রধান লক্ষ্য।